অনেকেই বলে থাকেন, ‘আমি আমার জীবনকে কীভাবে পরিবর্তন করতে পারি?’ এই প্রতিবেদনটি এর উত্তর দিয়ে দিবে। হ্যাঁ, উত্তর হলো, একটিমাত্র আইডিয়া আপনার জীবনকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিতে পারে। কীভাবে? জেনে নিন কিছু বাস্তব জীবনের উদাহরণ দিয়ে।
আমরা যখন কোনো সমস্যায় পড়ি তখন সেখান থেকে উদ্ধারের জন্য ভাবতে থাকি কীভাবে এর সমাধান করা যায়। তখন অনেক আইডিয়া আমাদের মাথায় আসে। কিন্তু কাজে আসে একটি মাত্র আইডিয়া। তবে হ্যাঁ, আমাদের সবসময় সমাধান খোঁজার মানসিকতার পরিবর্তে সমস্যা সমাধানের মানসিকতা রাখা উচিত।
আমরা সারাদিনে অনেক আইডিয়া হয়ত জেনারেট করি বাট এর মাঝ থেকেই ছোট্ট একটা আইডিয়াই কিন্তু আমাদের পুরো পৃথিবীটাকেই পরিবর্তন করে দিতে পারে। আমাদের জীবনটাকে পরিবর্তন করতে পারে। ছোট্ট একটি উদাহরণে বোঝানো যেতে পারে। নিউটনের কথাই ধরুন। একটা আপেল যখন তার সামনে গাছ থেকে মাটিতে পড়লো তখনই তার মাথায় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আইডিয়াটি এলো এবং এরপরই ক্ল্যাসিকাল ফিজিক্সের যুগের শুরু হলো। ঠিক এর মতো একবিংশ এই শতাব্দীতে একটিমাত্র আইডিয়া থেকে জীবন পরিবর্তনের অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চারপাশে আছে যেগুলো প্রতিনিয়তই আমাদের লাইফস্টাইলকে পরিবর্তন করছে।
ব্যর্থ আইডিয়াগুলোও কখনও মূল্যহীন হয় না। প্রতীকী ছবি।
ব্যর্থ আইডিয়া
আমরা নিশ্চয়ই থমাস এডিসনের বাল্ব উদ্ভাবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা জানি। তিনি একটি বাল্ব তৈরির জন্য ১০০০ বার চেষ্টা করে গেছেন। অর্থাৎ একটা বাল্ব তৈরি করতে তার ১০০০ আইডিয়া ছিল এবং তা করতে গিয়ে তিনি বিন্দুমাত্রও বিচলিত হননি। কেননা তিনি হয়ত জানতেন যে, এই ১০০০ আইডিয়ার মাঝে একটি আইডিয়া অবশ্যই কাজ করবে এবং তা করেছেও। আর ঐ একটা আইডিয়াই আমাদের ঘরে আলো জ্বালিয়েছে, রাতের অন্ধকার দূর করেছে। তাই বলে বাকি ৯৯৯ আইডিয়া আমাদের কাছে কোনোভাবেই মূল্যহীন নয়। এ প্রসঙ্গে থমাস এডিসন বলেন, ‘আমি ব্যর্থ হইনি, আমি শুধু ১০০০ উপায় বের করেছি যেগুলোর একটি কাজ করে ও বাকিগুলো কাজ করে না’।
বন্ধুত্ব করার আইডিয়া থেকেই ফেসবুকের সৃষ্টি। ছবি: সংগৃহীত।
ফেসবুক
মানুষকে জানার তাগিদে এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার উদ্দেশ্যেই ফেসবুকের সৃষ্টি। হ্যাঁ, এটা উদ্ভট একটা আইডিয়া হতে পারে। কোথাও না গিয়ে শুধু ঘরে বসে ল্যাপটপের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো কোণের মানুষকে বন্ধু বানানো পাগলাটে চিন্তা বলতে পারেন। কিন্তু এই উদ্ভট আইডিয়াই আজ আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করেছে। আমাদের এখন এক মুহূর্তও ফেসবুক ছাড়া চলে না।
জানতে চাইলে গুগলকে প্রশ্ন করি। ছবি: সংগৃহীত।
গুগল
১৯৯৮ সালে ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন নামে দুজন পিএইচডি স্টুডেন্ট গুগলের উদ্ভাবন করেন। এটা আমরা সবাই জানি যে, গুগল মূলত সার্চ ইঞ্জিন এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো বিষয়ে সার্চ করে জানতে পারি। বর্তমানে গুগল আমাদের কাছে টিচারের মতো। যেকোনো বিষয়ে জানতে হলে আমরা গুগলকে প্রশ্ন করি। এটাও একটি মাত্র আইডিয়া থেকেই সৃষ্টি এবং এটাও আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করেছে।
সামান্য ছবি শেয়ারের অ্যাপ থেকেই ইনস্টাগ্রামের সৃষ্টি। ছবি: সংগৃহীত
ইনস্টাগ্রাম
ইনস্টাগ্রাম ২০০৯ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির দুজন স্টুডেন্ট মাইক ক্রিগার ও কেভিন সিসট্রোম উদ্ভাবন করেন। এটিও মূলত একটি আইডিয়া থেকেই উদ্ভূত। একদিন কেভিন ফটো শেয়ারিং অ্যাপ এর একটা আইডিয়া নিয়ে আসেন এবং মাইকের সাথে আলোচনা করে তা বানিয়ে ফেলেন। চিন্তা করে দেখুন, একটিমাত্র অ্যাপ আইডিয়া যা শুধু ছবি শেয়ার করবে আর কিছুই না। প্রথম প্রথম এটাকে পাগলাটে আইডিয়া ছাড়া কিছুই ভাবা হতো না। অথচ আজ এটা ছাড়া আমরা কিছুই ভাবতে পারি না।
মজা কিংবা পড়াশোনায় ইউটিউবের জুড়ি নেই। ছবি: সংগৃহীত 
ইউটিউব
ইউটিউব এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে যে কেউ যেকোনো বিষয়ের উপরে যেকোনো ভিডিও শেয়ার এবং একইসাথে দেখতে পারবে। আপনি মজা নেয়ার জন্যও এটা ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে অনেকে এটার মাধ্যমে পড়াশোনাও করতে পারে। আর আপনি যদি একটা সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী, রান্নার গুণের অধিকারী, মেকআপ দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে এখান থেকে খুব সহজে আয়ও করতে পারেন। এটাও নিশ্চয়ই আমাদের জীবন পরিবর্তনে সহায়তা করছে এবং এটাও একটামাত্র আইডিয়া থেকেই এসেছে।
হোয়াটসঅ্যাপে প্রোফাইল পিকচারও দেওয়া সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত।
হোয়াটসঅ্যাপ
জান কউম যখন ফেসবুকে চাকরি পেলেন না তখনই ২০০৮ সালে হোয়াটসঅ্যাপ আবিষ্কার করেন। মেসেজিং অ্যাপ হয়ত অনেক আছে কিন্তু এটার গ্রুপ চ্যাটটি বিশেষ একটি ফিচারের। আপনি চাইলে এখানে প্রোফাইল পিকচারও দিতে পারেন এবং স্ট্যাটাসও দিতে পারেন। প্রিয় পাঠক, এই হোয়াটসঅ্যাপও কিন্তু একটি আইডিয়া থেকে জেনারেট করা হয়েছিল। 
এছাড়াও রয়েছে কার বুকিং অ্যাপ ক্যারিম, টেড টকস, অ্যামাজন ইত্যাদি। এগুলো একটিমাত্র আইডিয়া থেকেই উদ্ভাবিত এবং আমাদের জীবনকে অনবরত পরিবর্তন করে চলছে।
ব্যর্থ আইডিয়ার মাঝে সফল আইডিয়াকে খুঁজে বের করুন যা আপনার জীবনকে পরিবর্তন করে দিবে। প্রতীকী ছবি।
সুতরাং আপনি যদি ফেসবুক, টুইটার, অ্যামাজন, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির এসব পাগলাটে আইডিয়ার ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আজ থেকেই নিজের আইডিয়াগুলো নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। আপনার হয়ত কোনো সমস্যা সমাধানের খুব সাধারণ একটা আইডিয়া আছে। সেটা নিয়েই কাজ শুরু করে দেন। বলা যায় না, এই ছোট্ট এবং সাধারণ আইডিয়া থেকেই অদ্ভুত কিছু হতে পারে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, অন্য সবার আইডিয়া স্টাডি করে নতুন কিছু শিখতে পারেন কিন্তু তা কপি বা চুরি করতে যাবেন না। কেননা আপনি যদি আইডিয়া চুরি করে গুগল তৈরি করতে যান এটা খুব বড়জোর ফায়ারফক্স বা অপেরা হবে। আবার আপনি যদি ইউটিউব বানাতে যান এটাও খুব বড়জোর ডেইলিমোশন হবে। সুতরাং এটা নিশ্চিত হোন যে আপনি আপনার আইডিয়াতে অদ্বিতীয় এবং পরিশ্রমে অভিন্ন। কেবল তখনই আপনি আপনার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারবেন।
সূত্র: বর্নরিয়ালিস্ট