আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

May 14, 2014

মোদির জয়ে আওয়ামী লীগ কি সংকটে পড়বে

মোদির জয়ে আওয়ামী লীগ কি সংকটে পড়বে

সম্প্রতি ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। নয় লাখ ৩০ হাজার ভোট কেন্দ্রে ৮১ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের নয় পর্বে ভোট গ্রহণ সমাপ্তি পর এখন ফলাফল ঘোষণার পালা। এই নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের মতো বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের আগ্রহের কমতি নেই। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়াতে ওই নির্বাচন নিয়ে এদেশের শুধু সাধারণ জনগণ নয়; এদেশের গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামীন্ত সমস্যা, পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় প্রতিটি বিষয় প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত হওয়াতে এই নির্বাচনের গুরুত্ব বাংলাদেশের জনগণের নিকট কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎও এই নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে। কারণ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপর বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ অনেক কিছুই নির্ভর করছে। 

বিশেষ করে কংগ্রেসের বদলে যদি বিজেপি সরকার গঠন করে; তবে বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাবে-এমন ভাবনাও এক্ষেত্রে কাজ করছে। বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতে কংগ্রেসের বদলে বিজেপির লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটের পক্ষেই যাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এমন দাবি অযৌক্তিক নয়। কারণ বাংলাদেশের একপক্ষীয় দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের বর্তমান কংগ্রেস সরকারের একপক্ষীয় ভূমিকা কারোর অজানা নয়। নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর ও তার অপতৎপরতা সম্পর্কে জনগণ সম্পূর্ণ ওয়কিবহাল। সব দল অংশ্রহণ না করলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে বলে তিনি মত প্রদান করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে ভারতের কংগ্রেস সরকারের অন্ধ সমর্থন নিশ্চিত করেছিলেন, যা বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। নির্বাচন পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ সরকার ভারতের কংগ্রেস সরকারের অন্ধ সমর্থন পেয়েছে। তাই এদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে যে, বর্তমান বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট তা ভারতের কংগ্রেস সরকার নিজেদের স্বার্থে জিইয়ে রেখেছে। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্ধিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের অসামান্য অবদান রয়েছে। তৎকালীন সংকটময় মুহূর্তে কংগ্রেস সরকার এদেশের জনগণকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়েও ভারতের কংগ্রেস সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে ভারতের কংগ্রেস সরকারের এক ধরনের হৃদ্যতা শুরু থেকেই গড়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর জার্মান প্রবাসী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনারকে তারা আশ্রয় দিয়ে ওই সম্পর্ককে আরো দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারতের কংগ্রেস সরকারের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেকে যে অনুযোগ করেন তা ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সত্য হওয়াই স্বাভাবিক। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এই সম্পর্ক সুখকর হলেও বাংলাদেশের জন্য ওই সম্পর্ক কখনও সুফল বয়ে আনেনি। শেখ হাসিনা ওই সম্পর্ক ব্যবহার করে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো সুবিধা আদায় করতে পারেননি। বরং ওই সম্পর্কের দোহাই দিয়ে ভারতের কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে অনেক বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। 

বাংলাদেশের জনগণের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে ভারতকে ‘সাত খুন মাপ’ করে দিতে চায়। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন করেনি। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে আমরা অস্বীকার করছি অথবা খাটো করে তুলে ধরার চেষ্ঠা করছি এমন নয়; বরং সত্য ইতিহাস হলো- ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল তাদের নিজেদের স্বার্থে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ভারত উপলব্ধি করেছিল যে, ভারতের দুই পাশে অবস্থিত দুই পাকিস্তান ভারতের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। ’৬৫ সালের পর হতেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ পাকিস্তানের দুই অংশকে আলাদা করার ছক এঁকেছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার সাথে পাকিস্তানী অগণতান্ত্রিক সামরিক জান্তার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সামনে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ আসে। তারা এই সুযোগকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসী সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল ভারত; যাতে বাংলাদেশের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বলবৎ থাকে। ভারতীয়দের এই নীতি অনেকটা ব্রিটিশদের নীতির মতো। ব্রিটিশরা এদেশ শাসন করার জন্য নিজেদের আজ্ঞাবহ সরকারি কর্মচারী গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিল; যারা চেহারা সুরতে ভারতীয় কিন্তু চিন্তা-চেতনায় ব্রিটিশ ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারত সরকারও ব্রিটিশদের এই নীতি অনসুরণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটি গ্রুপকে প্রবাসী সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও বিশেষ তত্তাবধানে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল; যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে এই গোষ্ঠীকে ভারত নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। ওই বাহিনী ‘মুজিব বহিনী’ নামে পরিচিত ছিল। এ কে খন্দকারের ভাষায়: ‘আমি যতটুকু জানি, এ বিষয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে ভারতীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল যে এমনটা কেন হলো। আমাদের না জানিয়ে কেনই বা এমন একটা বাহিনী গড়ে তোলা হলো। ...ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী নাকি জানিয়েছিলেন যে, তিনি এ বিষয়টি দেখবেন। ...ভারত সরকার এ বিষয়ে তেমন কিছু আর করেনি। আমার মনে হয়েছে তারাও চেয়েছে যে মুজিব বাহিনী নামের যে বাহিনী, সেটা থাকুক এবং কাজ করুক।’ (মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর, প্রথমা, ২০০৯, পৃ. ১১৯)।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত ‘তাজউদ্দিন আহমদ নেতা ও পিতা’ গ্রন্থে ওই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছেন: “‘এক বাক্সে সকল ডিম’ না-রাখার পক্ষপাতী ভারত সরকারও মুজিব বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে গোপন রাখে। ব্যাপারটি বেশদিন গোপন থাকে না। আগস্টে আব্বু যখন দিল্লি সফর করেন, সেখানে তিনি ‘র’ এর সাহায্যপুষ্ঠ ‘মুজিব বাহিনীর’ ক্রমবর্ধমান উচ্ছৃঙ্খল কার্যকলাপ ও সরকার বিরোধী ভূমিকা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিভক্তকারী মারাত্মক সমস্যা সমাধানের জন্য পি.এন হাকসার (ইন্দিরা গান্ধীর সচিব) এবং ‘র’ প্রধান রামনাথ কাওয়ের সাহায্য চান। কিন্তু দুজনেই নীরব থাকেন।” (ঐতিহ্য, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ১১৭)। 
ভারতের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের এই ভূমিকা অনেকের কাছে ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ মনে হতে পারে। তবে এই শিবের গীত গাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয়দের মনোভাবটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস। যাদের ভারতপ্রীতি বাংলাদেশপ্রীতিকে হার মানায় অথবা যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করতে গিয়ে অন্ধভাবে ভারতের বিরোধিতা করেন তাদের উভয় পক্ষের জন্যই এই গীত। অন্ধভাবে ভারত সমর্থন যেমন বাংলাদেশের জন্য লাভজনক নয়; তেমনি অন্ধভাবে ভারত বিরোধিতাও বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।

কংগ্রেস সরকারের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের আঁতাতই বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থির পরিবেশের জন্য দায়ী যারা মনে করেন; তারা বিশ্বাস করেন যে, যদি ভারতের কংগ্রেস সরকার অন্ধভাবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে একপক্ষীয় বিতর্কিত নির্বাচনে সমর্থন না দিত; তবে বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সংকট আরো দীর্ঘ হওয়া থেকে রেহাই পেত। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চরমভাবে ব্যর্থ এই পক্ষ নিজেরদের রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে আড়াল করতে ভারতের ওপর দায়ভার চাপিয়ে পার পেতে চাওয়ার মানসিকতা থেকে এমন অভিযোগ করছে-এমনটি শতভাগ সত্য না হলেও অনেক ভাগ সত্য। কারণ ভারত যতই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করুক না কেন বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী প্রধান বিরোধী দল যদি জোরালো সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারত; তবে জনগণের আন্দোলনের মুখে বর্তমান সরকারকে মাথা নোয়াতেই হতো। কিন্তু বিরোধী দল এক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাদের দায়ভারও কম নয়। তবে একথাও সত্য যে, ভারতের সমর্থন ছাড়া বর্তমান সরকারের টিকে থাকাও অসম্ভব।

ভারত বিদ্বেষী বিরোধী পক্ষ ভারতের বর্তমান নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে যে আশায় বুঁক বেঁধেছেন তা কতটুকু সত্য হবে তা শতভাগ নিশ্চত করে বলার এখনই সময় হয়নি। এই পক্ষ যা ভাবছেন: ‘যদি ভারতের কংগ্রেস সরকার পরাজিত হয়; আর বিজেপি বা অন্য কোনো সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তবে  আওয়ামী লীগ আগের মতো আর ভারতের সমর্থন পাবে না। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেবে।’ তবে এটাও সত্য যে, ভারতে যে দলই ক্ষমতায় অসুক তারা পাকিস্তানের বিরোধিতা যেমন করবে, তেমনি তারা বাংলাদেশের ব্যাপারেও দাদাগিরি দেখানোর ক্ষেত্রে কোন ছাড় দিবে না। 

কংগ্রেস বা বিজেপি যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন বাংলাদেশের  প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন না হওয়াই স্বাভাবিক। যদি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের আজ্ঞাবহ সরকার হিসেবে তাদের সুনাম অক্ষুণœ রাখে, ভারতের দাবি অনুয়ায়ী ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট ও বন্দরগুলো ব্যবহার করতে দেয়। সীমান্তে বিএসএফ-এর পাখির মতো গুলি করে নীরিহ মানুষ হত্যার পরও জোরালো প্রতিবাদ না করে, বেরুবাড়ির মতো ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর আগ্রাসান রুখে দেওয়া বীর সেনানী আমাদের সীমান্তরক্ষী সদস্যদের পুরষ্কারের বদলে তিরষ্কার করা অব্যাহত রাখে, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাসহ অন্য বিয়ষগুলোতে নমনীয় ভূমিকা পালন করে; তবে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে যে সরকারই ক্ষমতা গ্রহণ করুক না কেন তারা নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার যাতে স্বগৌরবে টিকে থাকতে পারে তার সব ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত যে বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারধীন তার রায় পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের আজ্ঞাবহ সরকার থাকাটা ভারতীয়দের জন্যই লাভজনক। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের গণতান্ত্রিক নৈতিক বৈধতার অভাবে তারা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রের মতো পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। একপক্ষীয় নির্বাচনের কারণে এই সরকারের নৈতিক বৈধতা না থাকায় তারা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর নিকট থেকে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এখনও জোরালো সমর্থন আদায় করতে পারেনি। যদিও অনেক রাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থে এই সরকারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। সেক্ষেত্রেও নেপথ্য ভূমিকা রাখছে ভারত। ওইসব সরকার ভারতের দিকে তাকিয়েই অথবা ভারতের সাথে যাতে সুসম্পর্ক নষ্ট না হয়; সে দিকটি চিন্তা করেই ভারতের সমর্থনপুষ্ট বাংলাদেশ সরকারের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। অতএব ভারতের লোকসভা নির্বাচনে যদি কংগ্রেসের বদলে বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাতেও বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আসবে-এমনটা আশা করা ঠিক না।

তবে বাংলাদেশের সরকার বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ লাভবান হতে পারে অন্য ক্ষেত্রে। আর সেটা হলো, বিজেপি সরকারের উগ্রহিন্দুত্ববাদী নীতির কারণে তারা ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেঁধে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গুজরাটের দাঙ্গায় অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত করার অতীত ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস কেন্দ্রিক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে হাজার হাজার নীরিহ-নিরপরাধ মুসলিমকে হত্যার ইতিহাস কারো অজনা নয়। এবার নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তারা যদি বাবরি মসজিদের জায়গাতে রাম মন্দির নির্মাণ করতে চায়; তবে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা তা প্রতিহত করতে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আর যদি ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে; তবে বাংলাদেশও তার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে বলে মনে হয় না। আর এমন কিছু যদি ঘটেই যায়, তাহলে বর্তমান একপক্ষীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে তা মোকাবিলা করা একেবারেই অসম্ভব হবে। যা শেষপর্যন্ত সরকারের পতন ঘটালেও ঘটাতে পারে। 

আর বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতাদের নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতি আনুযায়ী ভারতে অনুপ্রবেশের নামে বাঙালি মুসলিম হটাও আন্দোলনের অশুভ সূচনা হলে ওই মুসলিমরা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে অথবা বিএসএফ এর পুশব্যাক প্রকল্পের মাধ্যমে বিজেপি সরকার তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠালে সরকারকে নতুন একটি সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি বর্তমান সরকারকে চূড়ান্ত বেকায়দায় ফেলতে পারে। সরকারের সাথে কতিপয় ইসলামী দলের যে গোপন আঁতাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা-ও ভেঙে যেতে পারে। সরকারের ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা হবে। যাই হোক, ভারতের এই লোকসভা নির্বাচন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য অগ্নি পরীক্ষাও বলা যেতে পারে।
লেখক : শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

No comments :

Post a Comment