আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

May 21, 2014

সফল মাতা পিতা হতে হলে

সফল মাতা পিতা হতে হলে
সন্তান জন্ম দেয়া সহজ কিন্তু বাবা মা হওয়া কঠিন। মানুষ করা আরও কঠিন। মা-বাবা’র কাছে সন্তান অমূল্য সম্পদ। তাদের ঘিরেই থাকে সব স্বপ্ন অথচ সাকসেসফুল প্যারেনটিং বা সফল বাবা-মা কী করে হতে হয় অধিকাংশরাই তা জানেন না বা মানেন না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে সন্তানদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে, সন্তানরা মিসগাইডেড হচ্ছে, মানসিক যন্ত্রণা ও দ্বন্দ্ব বাড়ছে। গরু, ছাগলের বাচ্চা জন্ম নিয়েই দৌড়ায় কিন্তু মানব সন্তানকে যত্ন ও নিয়ম করে হাঁটতে-দৌড়াতে শিখাতে হয়। আমরা শিখাচ্ছিও। আমরা শিশুর শারীরিক বা গাঠনিক বিষয় যতটা গুরুত্ব দিচ্ছি কিন্তু তার মানসিক বিকাশ, তার চিন্তা-চেতনা ইতিবাচকভাবে গড়ে উঠছে কিনা সেটা আমরা তেমনভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ফলে অধিকাংশ শিশুরা ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা-চেতনায় এবং অভ্যাসে বড় হয়ে উঠে এবং বড় হয়ে ওই সকল বদ অভ্যাস ও ত্রুটিগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্যাগ করতে পারে না। যেমন  দুই/তিন বছরের অনেক শিশুকে দেখবেন জিনিসপত্র নষ্ট করছে, যা খাচ্ছে অর্ধেক ফেলছে, টেবিলে-সোফায় লাফালাফি করে জিনিসপত্র ক্ষতি করছে। খেলনাপত্র ভাংচুর করছে। অন্য বাড়িতে গিয়ে সাজানো জিনিসপত্র নাড়াচাড়া বা নষ্ট করছে। জানালা দিয়ে বাইরে জিনিস ফেলছে এবং তার মা খুশি মনে বলছে আমার সন্তান দারুণ প্রাণচঞ্চল, দারুণ দুষ্ট। 

এ সব কথা তারাই বলেন যারা নিজেরা ওইভাবে বড় হয়েছেন এবং এ বিশৃঙ্খলভাবে বেড়ে উঠাকেই সঠিক মনে করছেন। অনেক মায়েরা এও বলে থাকেন, বাচ্চামানুষ করবেই তো, বড় হলে শিখবে। একদম ভুল কথা, বড় হলে শিখবে না। বরং এইসব বদ অভ্যাস, বিশৃঙ্খল কাজ ছেড়ে দিতে কষ্ট হবে। বাচ্চারা ৬ মাস থেকেই ভালমত শিখতে শুরু করে। আদর যেমন বোঝে বকাও বোঝে। ভালো কাজ খারাপ কাজ শেখার বা বোঝার ক্ষমতা ওই সময় থেকেই শুরু হয়ে যায়। যেমন দুই বছরের কোন শিশুকে দেখবেন চকলেটের কভার খুলে ঘরের কোণে রাখা ডাস্টবিনে গিয়ে ফেলছে। কোন নতুন বাসায়  গিয়ে শোপিস দেখছে কিন্তু ধরছে না। যাতে ভেঙ্গে না যায়। আসলে শিশুর অসীম মেধা মননকে আমরা উৎকর্ষভাবে বিকাশ করাতে জানি না। 
দুই বছরের বাচ্চারা নিয়ম, শৃৃঙ্খলা, সৌন্দর্যবোধ, গুছিয়ে রাখা, নষ্ট না করা, কোনটা করা উচিত এবং উচিত নয় তা বোঝার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। বরং আমরা অভিভাবকরা বুঝি না তাদের কিভাবে শেখানো উচিত। কারণ ওই শিশুর ব্লাংক ব্রেন সফ্টওয়ারে সবকিছু বুঝতে চায় জানতে চায় এবং সে তার ব্রেনে দ্রুত সবকিছু সংরক্ষণ করে রাখে। ছয় বছরের মধ্যে শিশুরা ব্রেনের পূর্ণতা পেয়ে যায় ওই বয়সে সে যা কিছু দেখে, শোনে, বোঝে পরবর্তী জীবনে তার প্রতিফলন ঘটে। স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা অথবা উদারতা, মায়া-মমতা প্রভৃতি ইতিবাচক বা নেতিবাচক গুণাবলিতে বিকশিত হয়। যা ইনপুট হবে পরবর্তী জীবনে তাই আউটপুট হবে। সুতরাং এই সময়টি শিশুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্র্ণ। আমাদের সবচেয়ে আদরের সন্তানকে আদব, কায়দায়, সৃষ্টিশীলতায়, আদর্শভাবে কিভাবে মানুষ করতে হয় তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়  আলোচনা করা হলো-

শিশুকাল থেকে ইতিবাচক শিক্ষায় গড়ে তুলুন:- 
আপনি কখনই মনে করবেন না যে শিশু কিছু বোঝে না, ও ঠিকই বোঝে ক্ষেত্র বিশেষে ও আপনার চাইতে দ্রুত গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। এখন সে কাদামাটি, যেভাবে গড়বেন ওইভাবে গড়ে উঠবে। বাবা-মা বাড়িতে থাকা ভাই-বোনরাই তার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক। শিশুরা দেখে শেখে, শোনে শেখে, করে শেখে। তাদের ব্রেনের সফট্ওয়ার একদম খালি এখন যা দেখবে শুনবে অনুভব করবে তা ব্রেনে দ্রুত রেকর্ড হয়ে যাবে। যেমন আপনার শিশু ঘরের ভেতর দৌড়াতে গিয়ে দরজার চৌকাঠে গিয়ে আঘাত পেয়ে কাঁদতে শুরু করলো আপনি তাকে সান্তনা দিতে গিয়ে দরজার চৌকাঠে আঘাত করে বাচ্চাকে বুঝালেন দরজাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, বাচ্চার কান্না থেমে গেলো। 
আপনি সন্তানকে শেখালেন, যে বাঁধা দেয় বা কষ্ট দেয় তাকে ধরে মারতে হয়। ফলে ওই শিশু প্রতিশোধ পরায়ণতা শিখল শিশুবেলা থেকেই। আরো একটি উদাহরণ, তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত সন্তানকে যে টিফিন দেয়া হয় সেটা অধিকাংশ সময় সে নিজে খায় না তার বন্ধুরা খেয়ে ফেলে। আপনি একদিন সন্তানকে বললেন, ‘তোমার টিফিন তুমি খাওনা, বন্ধুরা খায় কেন? তুমি বোকা না গাধা? নিজের স্বার্থ বুঝ না? আজ থেকে তোমার টিফিন বন্ধুরা যেন না খায়’। আপনি  সন্তানকে স্বার্থপরতা আত্মকেন্দ্রিকতা শেখালেন ওই সকল সন্তান পরবর্তীতে বৃদ্ধবাবা মা’কেও দেখবে না কারণ তাকে শেখানো হয়েছে স্বার্থপর হও। নিজেরটা আগে দেখো। অথচ শেখানো উচিত ছিলো বন্ধুকে জিঙ্গেস করে খেয়ো, সে খেয়েছে কিনা? মিলে-মিশে খেয়ো। মানুষকে সাহায্য করো, দুইটা ভালো কলম থাকলে বন্ধুকে দাও একটি। যাতে ও ভালো লিখতে পারে। বড় মন নিয়ে বড় হতে দিন। তবেই বাবা মাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করবে। যত দেয়া যায় বহুগুণে তা ফিরে আসে। 

শিশুদের আত্মমর্যাদাবোধ সমুন্নত রেখে গড়ে তুলুন:- 
অভিভাবকরা চান বাচ্চারা সম্মান ও মর্যাদাবোধ নিয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। কিন্তু তাদেরকে উপরে উঠাতে গিয়ে না বুঝে নীচে টেনে নামিয়ে দিচ্ছি। তাদের বড় করতে গিয়ে ছোট করছি। নিচের দিকে টানছি কিন্তু ভাবছি উপরে উঠছে। যেমন আত্মীয়র সামনে নিজের সন্তানকে বলছেন- ‘তোমার খালাতো ভাই কত বুদ্ধিমান কত সুন্দর করে কথা বলে, ব্যবহার কত ভালো, শিখো শিখো। কিছুতো পারো না’। আপনি সবার সামনে তার মর্যাদায় আঘাত দিলেন। আরও বললেন, ‘অমুক ছেলে পড়াশোনায়, খেলাধুলায় জিনিয়াস, তুমি কি করো তুমি তো গাধা’ আপনি কি ছেলেকে এনকারেজ করছেন নাকি ডিসকারেজ করছেন। 

একটি দুই বছরের শিশুকে তাচ্ছিল্য করলেও সে মন খারাপ করে সেখানে কিশোর বয়সী সন্তানকে সবার সামনে ছোট করে তাকে কিভাবে বড় করবেন? তার আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে হতে এক সময় তার মনে হবে ‘সত্যিই আমি গাধা আমাকে দিয়ে হবে না কিছু’। তার ভেতরের অফুরন্ত সম্ভবনাকে নষ্ট করলেন। সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয় না। আপনি কি আপনার সন্তানকে সবার সামনে কখনও প্রশংসা করেছেন?  উৎসাহ-উদ্দীপনা জুগিয়েছেন? ইনবর্ন ট্যালেন্টকে গুরুত্ব দিয়েছেন? তাদের মনের খোরাক মনের খাদ্য হলো উৎসাহ, সেটা দিয়েছেন? কখনো কি বলেছেন ‘আমার জিনিয়াস চাইল্ড, তোমাকে নিয়ে আমি গর্ব করি’। দেখবেন সন্তান কত উৎসাহিত হচ্ছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে বাবা-মার এই গর্বকে সমুন্নত রাখতে। উচ্ছৃঙ্খল নয় সুশৃঙ্খল পথেই বেড়ে উঠবে। একটি ঘটনাবলী, ঢাকার শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রী (আমার আত্মীয়) উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ ৫ (গোল্ড) পেয়েছে। সন্ধ্যায় তার বাবা অফিস থেকে এসে ড্রাইং রুমে বসে টিভি চ্যানেল বদলাচ্ছিলেন মেয়েটি তার বাবার পাশে খুশিমনে বসেছিলো কিছুক্ষণ কিন্তু তার বাবা তাকে কোন অভিনন্দন জানাননি। 

মেয়েটি আমাকে বলেছিলো আমি ভেবেছিলাম বাবা হয়তো খুশি হয়ে আমাকে কিছু বলবেন। অনেক অভিভাবক এমনও বলেন জিপিএ ৫(গোল্ড) পাওয়া কোন ব্যাপার নাকি! এত প্রাইভেট টিচার, এত কোচিং কয়জন পায়? মেডিকেল বা বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হও তখন বোঝা যাবে! আত্মীয়ের বাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়ে আনন্দ দেখাচ্ছেন অথচ এত কষ্ট করে যে এত ভাল রেজাল্ট করলো তাকে এক গোছা লাল গোলাপ তুলে দিয়ে বলছেন না ‘কে আছ একটি ছবি তোল’? মেয়ের মাথায় ¯েœহের হাত রেখে বলতে পারছি কী, ‘মহান আল্লাহ আরো বড় করুক তোমায়’। কয়জন আমরা এমনটি বলতে পারছি। ভাবখানা এমন প্রসংসা করলে বা ভাল বললে ভবিষ্যতে বোধ হয় খারপ করবে অথচ আপনার সন্তান আপনার মুখোজ্জল করতে চায়। আপনার খুশি ভালোবাসা অভিনন্দন পেতে চায় যা তাকে আরও শক্তি ও উৎসাহ জোগাবে। সুতরাং নিজের ছেলে/মেয়েদের তাদের ভেতরের অসীম ক্ষমতাকে জাগিয়ে তুলুন, তাকে স্বীকৃতি দিন পুরষ্কৃত করুন। আপনার ভালোবাসা, খুশি, দোয়া সন্তানের পাথেয় হবে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে।  

সন্তান ভুল করলে বা মন খারাপ থাকলে মনে শক্তি জোগান আগে সুস্থ করুন:- 
বয়ঃসন্ধির সময়টিতে সন্তানদের প্রতি মা-বাবার বিশেষ যত্ন ,ভালবাসা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের সাথে কমুনিকেশন আরও বাড়াতে হবে। ওই বয়সের গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য বিষয়গুলো সহজ ও সরলভাবে মনোবৈজ্ঞানিক কৌশলে বোঝাতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক কাজটি করতে ব্যর্থ হন। যেমন- আপনার স্কুল/কলেজ পড়–য়া সন্তান আবেগগত (প্রেম সংক্রান্ত) কোন ঘটনার  সাথে জড়িয়ে পড়েছে বিষয়টি আপনি জেনে ফেলে তাকে বকা-বকি করলেন বা বাসায় কয়েক দিন আটকে রাখলেন।

 বিষয়টি আপনি জেনে ফেলেছেন, তাতে আপনার সন্তান এমনিতেই বিব্রত এবং লজ্জিত। ফলে তার মানসিক শক্তি অর্ধেকে নেমে গেছে। অপরাধবোধ, সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে স্ট্রেসে ভুগছে। এই নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে তাকে উদ্ধার করে স্বাভাবিক  জীবনে নিয়ে আসার শক্তি জোগাবে কে? তার জীবনের সবচেয়ে আপনজন তার বাবা-মা। দায়িত্ব তাদেরই। অথচ তা না করে আপনি বকাবকি অত্যাচার অপমান করে যা কিছু ইতিবাচক এনার্জি তার ছিলো সেটাও ধুলার সাখে মিশিয়ে দিলেন। এখন তার বেঁচে থাকার শক্তিটা কোথায়? আপনাকে সঠিক বুদ্ধি ও পরামর্শ দেবার অনেকে আছে কিন্তু আপনার প্রিয় বন্দী সন্তানকে সঠিক পরামর্শ দেবার কে আছে? তাকে মেন্টালি স্টাবল করে তুলে মানসিক শক্তি প্রদানের মাধ্যমে তার আবেগীয় ভুলগুলো আলোচনা করে তার ভ্রান্ত বিশ্বাসের ভিত্তির (রং বিলিভ সিস্টেম) গভীরে গিয়ে তার থর্ট প্যাটার্ন অর্থাৎ চিন্তাধারার পরিবর্তন করলেই তার জীবনধারা বদলে যাবে। প্রয়োজনে মনোবিদ বা কাউন্সিলরের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু আমরা তা না করে মানসিক নির্যাতন করছি। বাবা মা সন্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু। ওই সময় সন্তানের মানসিক শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব আপনারই। সন্তানের মানসিক বিপর্যয়ের সময় সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বাবা মা। এক্ষেত্রে জরুরি বিষয় মনে রাখতে হবে। ‘কি ভুল করেছে’ সেটার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ‘কেন ভুল করেছে’।  পিন পয়েন্ট সমাধানের পথ তখনই সহজ হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ভুল আর না ঘটে।

 কার্যকর সময় দেয়া:- 
সফল মাতা-পিতা হবার গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো সন্তানদের সময় দেয়া এবং এক ছাদের নিচে এক সাথে থাকাকে সময় দেয়া বুঝায় না। সন্তান তার রুমে আর আপনি আপনার রুমে থাকাকে সময় দেয়া বুঝায় না। কোয়ালিটি টাইম অর্থাৎ কার্যকর সময় দেয়া মানে সন্তানের সাথে ভাব বিনিময় করা সন্তানের সাথে পড়াশোনা, খেলাধুলা বিষয় নিয়ে কথা বলা, গল্প করা, মাসে একবার হলেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ বা ডিনার করা, হতে পারে জন্মদিনে বা কোন উপলক্ষ্যে। বছরে ২/৩ বার দেশের দর্শনীয় বা ঐতিহাসিক স্থানে সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া। 
এ বিষয়ে বাচ্চাদের পরামর্শ চাওয়া, কোথায় গেলে ভালো হয় কিভাবে গেলে ভালো হয় ইত্যাদি বিষয়ে তাদের মতামত চাওয়া। এতে সন্তানদের দায়িত্ববোধ, গুরুত্ববোধ সৃষ্টিশীলতা বাড়ে এতে বাবা-মা’র সাথে আন্তরিকতা, মুক্তমনে আলোচনা করা রিলেশনশিপ যথার্থ থাকে। তখন জমে থাকা অনেক কথা খোলা-মেলাভাবে বাবা-মার সাথে শেয়ার করতে পারে। এমনকি কাউকে ভালো লাগার বিষয়টি বাবা-মা’র কাছে বলতে পারে তখন সঠিক সিদ্ধান্ত বাবা-মা সন্তানকে দিতে পারেন। এতে সন্তানরা মিস্ গাইডেড হয় না। বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত ও নেশাগ্রস্ততা থেকে সন্তানরা মুক্ত থাকে। অথচ অধিকাংশ পরিবারে দেখা যায় বাচ্চাদের বয়স ১২/১৩ বছর হয়ে গেলে তাদের সাথে তেমন কথা-বার্তা বলা প্রয়োজনবোধ করেন না অভিভাবকরা। অতি প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া কথা বলেন না। এমন অনেক পিতা আছেন সাত দিনে সাতটি কথাও বলেন না। 

তারা মনে করেন খাওয়া-পরা, স্কুল কলেজে পড়ানো, প্রাইভেট টিউটর, পোশাক, পরিচ্ছদ, কম্পিউটার, দামি মোবাইল সব কিছুই তো দেয়া হচ্ছে। যা চাচ্ছে সবই তো পাচ্ছে। অপূর্ণ তো কিছু রাখা হয়নি। অথচ বাচ্চারা চায় বাবা মা’র সান্নিধ্য, বাবা মার সহচার্য, বাবা-মা’র গল্প বলা, মুখের হাসি, ভালবাসা। এ যদি না থাকে তবে বাবা-মার সাথে সন্তানের মানসিক টান তৈরি হবে কীভাবে। রিলেশন থাকে কীভাবে? এতে সন্তানেরা বহিঃমুখী হয়ে পড়ে, ভুল বন্ধুদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে বিভিন্ন এ্যফিয়ারে, এডিকশনে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং বাচ্চাদের সময় দিতেই হবে। একটি সত্য ঘটনা বলছি, ৫ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এক প্রখ্যাত চিকিৎসকের সন্তান। তার পিতা সকালে মেডিকেল কলেজে যান এবং বিকালে প্রাইভেট রোগী দেখেন। রাত প্রায় ১২টার দিকে বাসায় ফেরেন এটি নিত্য ঘটনা। সন্তান বা স্ত্রীকে সময় দেবার সময় পান না। তার সন্তানটি একদিন বাবার সাথে বিকেলে নভোথিয়েটারে বেড়াতে যেতে চেয়েছিল পিতা সময় দিতে পারেননি, রোগী দেখার ব্যাপার আছে। ওই ছেলে মা, মামা, চাচা, খালু এমনকি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ছয় হাজার টাকা জমিয়ে একটি খামে ভরে সবিনয়ে বাবাকে বলেছিলো ‘আব্বু এই তোমার ছয় হাজার টাকা আগামীকাল তিন ঘণ্টা আমাকে নিয়ে বিকালে বেড়াতে যাবে’। ওই শিশু হিসাব করে দেখেছে তিন ঘণ্টায় তার বাবা ওই পরিমাণ টাকা আয় করেন সুতরাং একটি ছোট্ট শিশু আর কি-ই-বা করতে পারে। 
এর পরেও কি বাবা-মা’দের চেতনা ফিরে আসবে না? এত অর্থ সম্পদ কার জন্য? কিসের জন্য? পরিবারের সুখের জন্যই তো? কোথায় তবে সেই সুখ? সুতরাং বাবা-মা’কে ভাবতে হবে। একটি মজার কথা বলে আজকের প্রবন্ধ শেষ করবো: এক অভিভাবক সন্তানকে সঠিক নিয়ম-কানুনে মানুষ করতে না পেরে শেষে তার এক আত্মীয়কে বলছেন,‘সন্তান কথা-বার্তা শুনে না কী আর করবো আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি’। কি আশ্চর্য, শ্রষ্টা আপনাকে সন্তান দিয়ে মানুষ করার দায়িত্ব আপনার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। নিশ্চয় এটি আপনার জন্য পরীক্ষা। আপনি দায়িত্ব এড়াচ্ছেন কেন? আজ অধিকাংশ পরিবারে বাবা-মা’র সাথে সন্তানদের দূরত্ব বাড়ছে, দ্রুতগতিময় ব্যস্ত জীবনের জন্যই হোক, প্রযুক্তির যুগকে দোষ দিয়েই হোক। ভাবুন সমস্যাটি কোথায়। পারিবারিক শিক্ষা, সঠিক ধর্মীয় মূল্যবোধ, পিতামাতার দায়িত্ব, শিক্ষকদের মহান ব্রত। সমাজ সচেতনতার এক সমগ্রিক কার্যক্রম একটি শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। আসুন আমরা যার যার অবস্থান থেকে আদর্শ সন্তান তথা আদর্শ পরিবার ও সমাজ গড়ি।

ড. মো. আলমাসুর রহমান 
কাউন্সিলর: হলিসটিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা। 
মোবাঃ ০১৭১৬-৫০০২৩

No comments :

Post a Comment