টোটাল ফুটবলের জনক হল্যান্ড। মাঠে বেশিরভাগ দিনই দেখা দেয় কমলা ঝড় হয়ে। তাদের হারিয়ে দুই যুগ পর ফাইনালে উঠেছে ল্যাটিনের ছন্দময় ফুটবলের রাজা আর্জেন্টিনা।
বুধবার রাতে সাও পাওলোতে সাবেলার শিষ্যরা টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হল্যান্ডকে পরাজিত করে। এখন জীবন্ত কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার পর মেসির হাতে স্বপ্নপূরণের আর মাত্র ৯০ মিনিট দূরে আর্জেন্টিনা।
আগামী রবিবার মারাকানায় ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে জার্মানির। আগের দিন হিটলারের এই বাহিনী আয়োজক ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে ওঠে। ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য ত্রিপল প্রতিশোধেরও।
গতবার আফ্রিকা বিশ্বকাপে কোচ ম্যারাডোনার নেতৃত্বে দারুণ খেলছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম পর্ব ভালোভাবে পার করে। কিন্তু নকআউট পর্বে গিয়ে এই জার্মানির কাছে ৪-০ ব্যবধানে হেরে যায়। কোনো প্রতিরোধই সেদিন গড়তে পারেননি মেসিরা। এর আগের বিশ্বকাপেও এই জার্মানির কাছে হেরে তারা বিদায় হয়।
সেবারের চোখের পানি মেসি এবার সুদে-আসলে শোধ করতে চাইবেন! আবার এই ম্যাচকে ফাইনালের প্রতিশোধও বলা যায়। কারণ শেষ ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ ছিল এই জার্মানি। শেষদিকে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পেলে একমাত্র গোলে ম্যারাডোনার চোখের পানি ঝরান হিটলারের বাহিনী।
এবার সেটিরও শোধ কড়ায়-গণ্ডায় নিতে চাইবে আর্জেন্টিনা। কারণ ২৪ বছর ধরে ক্ষোভ চেপে বসে আছে তারা। ১৯৮৬ ও ৯০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন দলে ছিল ম্যারাডোনা, আর ২০১৪ এর ফাইনালের দলে আছেন ভিনগ্রহের ফুটবলার মেসি।
প্রথমপর্ব থেকে দলকে একাই তুলে এনেছেন বার্সেলোনার এই স্ট্রাইকার। দিন গড়ানোর সঙ্গে ছন্দে ফিরেছে পুরো আর্জেন্টিনা। এখন শুধু মেসি নন, গোটা দল হয়ে খেলছে ম্যাচের পর ম্যাচ। আর ডিফেন্স নিয়ে চিরায়ত যে বদনাম, গত তিন ম্যাচে তাও ঘুচিয়ে দিয়েছেন ম্যাচোরানা, জাবালেতা, ডেমিচিলিসরা।
অন্যদিকে, সেমি-ফাইনালে আয়োজকদের লজ্জায় ডুবিয়ে ৭-১ গোলে জয় নিয়ে দারুণ উজ্জীবিত জার্মানি। ১৯৯০ সালের পর ২০০২ এ ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনাল খেললেও শিরোপার স্বাদ পায়নি তারা। ওই ম্যাচে জার্মানরা ০-২ গোলে হেরেছিল।
ইতিহাস বলে জার্মানরাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। তারাও ১৯৮৬ বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। পুরো আসরেই গোটা জার্মান একটা দল হয়ে খেলেছে। তাদের একক মেসি না থাকলেও আছেন এক ঝাঁক মুলার, ওজিল, শোয়েনস্টেইনগার, ক্লোসা।
জার্মানি এ পর্যন্ত ফাইনাল খেলেছে সাতবার। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তিনবার। আর রানার্সআপ হয়েছে চারবার। এখন দেখার বিষয় কার হাতে ওঠে স্বপ্নের শিরোপা! ফুটবলের সব অর্জন পায়ে মাখানো মেসি কী পারবেন অধরা এই ট্রফি জিতে আরেকজন পেলে কিংবা ম্যারাডোনা অথবা তাদেরও ছাড়িয়ে যেতে?
No comments :
Post a Comment