আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

Jan 27, 2015

‘ঢেকে দিও না, বাবার মুখটা আর একটু দেখি....’ : দুই গাল হাত বুলিয়ে চির বিদায় দিলেন ছেলেকে



‘আমার বাবার মুখটা ঢেকে দিও না, বাবাকে আরেকটু দেখি, কোকোরে শেষবার মা বলে ডাক....। চোখের পানিতে ভেজা আবেগাপ্লুত এই দুই-তিনটি কথার পর আর কোন বাক্যই যেন বের হলো না খালেদা জিয়ার কণ্ঠ থেকে। শুধুই কাঁদছিলেন। কখনো ডুকরে, কখনো নাতনীকে জড়িয়ে কান্না। দুই নাতনীর সঙ্গে দাদীর কান্না যেন একাকার হয়ে যায়। চোখের পানিও পড়েছে নিথর সন্তানের মুখে। একের পর এক চোখ মুছছিলেন টিস্যু দিয়ে। সন্তানহারা মায়ের মাতম দেখে আশপাশের অন্যরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। শেষ বিদায়ে প্রিয়পুত্রকে দুই গালে হাত বুলিয়ে দেন মা খালেদা জিয়া। প্রায় ৪৫ মিনিট। কি যে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মুখে বলে বা কাগজে লিখে তা প্রকাশ করবার নয়। এ দৃশ্য গুলশান-২এ ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে।
কার্যালয়ের চারপাশে হাজার হাজার মানুষ। শোকাবহ পরিবেশ। ক্ষণে ক্ষণে উপস্থিতজনদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল কালেমায়ে শাহাদাৎ আর আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনি। ঘড়ির কাঁটায় তখন দ্পুুর ১ টা বেজে ৩৮ মিনিট, আলিফ মেডিক্যাল সার্ভিসের একটি এম্বুলেন্সে করে বিমানবন্দর থেকে কোকোর লাশ গুলশানে পৌঁছায় দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় ঠেলে ১টা ৪৮ মিনিটে লাশ বের করে রাখা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নিচ তলার রুমে। এম্বুলেন্সের উপরে শ্রদ্ধাস্বরূপ ছিলো ফুলের তোড়া। 
প্রায় ১০ মিনিট পর দোতলা থেকে বেগম জিয়াকে হাতে ধরে নিয়ে আসা হয় নিচতলায়। ক্রিম কালারের সুতি শাড়ি পরিহিতা বেগম জিয়া সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে তার ছোট দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিথি ছিলেন সাথে। কক্ষে বেগম জিয়ার প্রবেশ ও পরিবেশের সঙ্গে অনেকে নিজেদের আর সামালে রাখতে পারেনি। সবাই অশ্রুসজল ছিলেন। এর পরের দৃশ্যপট আরো বেদনাবিধূর। ছেলের কফিনের সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেগম জিয়া। গুলশান কার্যালয়ের নিচ তলায় যেখানে সংবাদ সম্মেলন বা নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা হয় সেখানেই। কোকোর কফিনের পাশে বসে রয়েছেন বেগম জিয়া। প্রায় সময় টিসু দিয়ে চোখ মুছছিলেন। সোনালী কাঠের কফিনে সাদা পোশাকে নিথর শুয়ে আছেন কোকো। মুখে দাড়ি। মা যখনই ছেলের দিকে তাকাচ্ছিলেন তখন কাঁদছিলেন শিশুর মতো।
বেগম জিয়ার পাশে ছোট দুই ভাইয়ের স্ত্রী, কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিথি, দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়া ছিলেন। নিচতলায় পরিবার পরিজনের বাইরে কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। পারিবারিকভাবে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন চলে অনেকক্ষণ। কফিনের পাশে বসে দুই হাত তুলে ছেলের জন্য অশ্রুসিক্ত হয়ে মোনাজাত করেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুসহ তাদের আত্মীয় স্বজন ছাড়াও সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম ডিউ প্রমুখ ছিলেন। এই সময়ে পাশের কক্ষে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত চলছিলো।
প্রায় ৩৫ মিনিট কফিনের পাশেই বসা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর তার সামনে কফিনটি ঢেকে দেয়া হয়। সেটাও ছিলো অনেক বেদনার। কান্নার মধ্যেই বেগম জিয়া নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেকে বিদায় দিয়েছেন অজানার দেশে। 
একদিকে লাশের কফিন এম্বুলেন্সে এবং অন্যদিকে বেগম জিয়াকে ধরে নিয়ে দোতলায় তুলেছেন তার দুই ভাইয়ের বউ।
১৯৭০ সালে যখন স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামে দেশের আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছিল, ঠিক ওই সময়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে আরাফাত রহমান কোকো জন্ম নেন। ছোট বলে মায়ের কাছে সবচেয় প্রিয় ছিলো কোকো। যেকোনো আবদার মায়ের নিমিষেই পূরণ করতে হতো। আজ সেই প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে বেগম জিয়া যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
ইন্তেকালের সংবাদ শোনার পর থেকে গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়া নিজের চেম্বারে শোকে কাতর হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা প্রথম দিকে তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। শনিবার থেকে তিনদিন যাবত বেগম জিয়ার সঙ্গে দলের নেতারাও সাক্ষাৎ করতে পারেননি। সকালে গুলশানের কার্যালয়ে বেগম জিয়া ও কোকোর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় স্বজনরা আসেন।
চির বিদায় দিয়ে শয্যাশায়ী খালেদা জিয়া : আদর-সোহাগ দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা ছোট ছেলেকে সবার আগে বিদায় জানাতে হবে এটা কখনো ভাবেননি খালেদা জিয়া। পুত্রের অকাল মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান তিনি। সন্তানকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানানোর পর এখনো নির্বাক খালেদা জিয়া। বিকেল পৌনে তিনটার দিকে লাশ জানাযা নামাজের জন্য এম্বুলেন্সে তোলার জন্য নেয়া হলে কার্যালয়ের দরজা পর্যন্ত পায়ে হেঁটে আসেন খালেদা জিয়া। সেখানে দাঁড়িয়েই ছেলের লাশকে শেষবারের মতো বিদায় দেন। অশ্রুসজল নয়নে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রায় পাঁচ মিনিট সেখানে মুখে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার দুই চোখ থেকে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছিল। সেখান থেকে কার্যালয়ে দ্বিতীয় তলায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে যান স্বজনরা। তার রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হয়। কোকোর ইন্তেকালের পর থেকেই সাদা পানি, কখনো স্বজনদের আকুতির পর জুস ছাড়া কিছুই খাননি খালেদা জিয়া- এমনই জানিয়েছেন সহকর্মীরা।

No comments :

Post a Comment