ইসলামিক স্টেট, আইএসআইএস, আইএসআইএল বা অন্য যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এই সংগঠনটি কোথা থেকে এলো, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি বরং সংগঠনটির সহিংস মতাদর্শে ধাঁধায় পড়ে গেছি। বর্তমানে ব্রিটেনে বসবাসকারী বৈচিত্র্যময় মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কিছু বলার ইচ্ছা আমার ছিল না। তবে আমার অনুমান, এই গ্রুপটির নজিরবিহীন উত্থানে উদ্বিগ্ন বেশির ভাগ লোকই আমার বক্তব্য সমর্থন করবেন।
অবশ্য ব্রিটিশ মিডিয়ার একটি অংশের উসকানিতে ইসলামাতঙ্কিত, বর্ণবাদী এবং তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা বিদ্বেষমূলক যেসব বিষোদগার করছেন, সেটাও নজিরবিহীন। এতে কোনো ধরনের লাভই হচ্ছে না।
অবশ্য ব্রিটিশ মিডিয়ার একটি অংশের উসকানিতে ইসলামাতঙ্কিত, বর্ণবাদী এবং তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা বিদ্বেষমূলক যেসব বিষোদগার করছেন, সেটাও নজিরবিহীন। এতে কোনো ধরনের লাভই হচ্ছে না।
টুইটার, ফেসবুকে সবাইকে, এমনকি যাদের মুসলমানের মতো দেখা যায় তাদেরও, আইএসআইএসের বিরুদ্ধে মাঠে নামার যে দাবি জানাচ্ছে, আমি তার বিরোধী, আমি সেগুলো ব্লক করে দিয়েছি। তবে আমি অবাক হয়ে লক্ষ করছি, মিডিয়ার অনেকেও এ ধরনের বাকওয়াজ করছেন।
আইএসআইএসের বিরুদ্ধে আমার কথা না বলার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হলো, আমি নিশ্চিত নই এরা কারা, কোথা থেকে তারা এসেছে, তাদের তহবিল জোগান দিচ্ছে কে? মধ্যপ্রাচ্যে আমি ভীতি সৃষ্টিকারী ও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল হিজবুল্লাহ ছাড়া আগে কখনো এ ধরনের সামরিক ও কৌশলগত পারদর্শী কোনো গ্রুপকে দেখিনি। প্রকাশ্যে মন্তব্য করার আগে আরো অনেকের মতো আমিও আইএসআইএস সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইছি।
দ্বিতীয়ত, আমি কেন আইএসআইএসের বিরুদ্ধে মাঠে নামব? তাদের কাজের জন্য তো আমি দায়ী নই, ঠিক যেমন দায়ী নয় মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতা সৃষ্টিকারী ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমের জন্য আমার ইহুদি বন্ধুরা। আইএসআইএস যখন মাথা আর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কর্তনকারী ছোরা ব্যবহার করছে, সেখানে ইসরাইলিরা ডেইসি কাটার নামের বোমা ফেলছে। এই বোমাও অঙ্গহানি ঘটায়, মৃত্যু ডেকে আনে।
তৃতীয়ত, আমার নীরবতার মানে এই নয় যে, আমি গ্রুপটিকে সমর্থন করি। অবশ্য কোনো কোনো খাটোবুদ্ধির লোক আমার নীরবতাকে সেই ইঙ্গিত বলেই ধরে নেয়। টুইটারে আমি বলেছিলাম, ধর্ষণের ঘটনা ঘটামাত্রই কি পুরুষ কেবল পুরুষ হওয়ার কারণে সব পুরুষকে ক্ষমা চাইতে হবে?
সবশেষ কারণ হলো, আমি যদি ‘আইএসআইএস পৃথিবীর জঞ্জাল’ বলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়েই পড়ি, তবে তাতে কী হবে? তাদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির কি ইয়াভনি রিডলির কথা শুনেই ঘুম হারাম হয়ে যাবে?
মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে যে গোলযোগ চলছে, তার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ২০০৩ সালে বিবাদ সৃষ্টিকারী জর্জ ডব্লিউ বুশ ও টনি ব্লেয়ার যদি ইরাকে অবৈধ যুদ্ধ শুরু না করতেন, তবে বিশ্ব কখনোই আইএসআইএসের কথা শুনত না। এক বছর আগে ঠিক এই সপ্তাহেই বাশার আল-আসাদ বাহিনীর বেসামরিক লোকজনের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের পর পাশ্চাত্য যদি সিরিয়ার ওপর নো-ফাই জোন প্রতিষ্ঠা না করত, তবে বিশ্ব কখনোই আইএসআইএসকে বর্তমানের দানবীয় আকারে দেখত না।
এখন কয়েকটি প্রশ্ন মনে আসছে : আইএসআইএসের প্রবল অগ্রযাত্রায় সত্যিকার অর্থে কারা উপকৃত হচ্ছে? সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে যারা আসাদ সরকারের সাথে বসে আছে তারা। ধারণা করা হয়ে থাকে, আসাদ সরকারই ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিক জেমস ফলিকে আটক করেছিল। সিরিয়া সরকারের হাতে থাকা লোকটি পৃথিবীর কোন ফাঁক গলে খুনি প্রবৃত্তির আইএসআইএসের হাতে গেল?
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আইএসআইএসের বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আসাদের সাথে আলোচনায় বসার জন্য পাশ্চাত্যের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন; কিন্তু যদি আসাদ এবং তার মিত্র ইরান (সিরিয়ার অংশবিশেষে তার দুর্ধর্ষ রিপাবলিকান গার্ড সদস্য মোতায়েন রয়েছে) যদি আইএসআইএস সৃষ্টি করে থাকে, তবে কী হবে?
পাগলের প্রলাপ মনে হয় এসব কথা? আইএসআইএসের অগ্রযাত্রার মুখে নূরি আল-মালিকির (ইরাকি প্রধানমন্ত্রী) বাহিনীর এই গ্রুপের ব্যবহারের জন্য বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ পেছনে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে কি? পালিয়ে যাওয়ার আগে প্রশিক্ষিত কোনো বাহিনীর তাদের সব সরঞ্জাম ফেলে যাওয়াটা কার্যত অসম্ভব। ঠিক যেমন অসম্ভব ইউরোপ এবং অন্যান্য স্থান থেকে আগত ক্ষুব্ধ তরুণ দলের নেতৃত্বে বিশৃঙ্খল বিদ্রোহী যোদ্ধারা দুর্দান্ত শক্তিতে পরিণত হবে।
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ইরাকে আইএসআইএসের আধিপত্য বিস্তার শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা। গ্রুপটি মাত্র কয়েক সপ্তাহে যা করেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ১০ বছরের দখলদারিত্বেও তা পারেনি। কাকতালীয়ভাবে এমনটা হওয়ার কথা নয়। এমন ধরনের সামরিক বিজয়ের জন্য প্রয়োজন হয় কৌশলগত পরিকল্পনা এবং গোপন সহায়তা। এ কারণেই প্রশ্ন জাগে, আইএসআইএসের পেছনে ঠিক কারা আছে?
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ইরাকে আইএসআইএসের আধিপত্য বিস্তার শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা। গ্রুপটি মাত্র কয়েক সপ্তাহে যা করেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ১০ বছরের দখলদারিত্বেও তা পারেনি। কাকতালীয়ভাবে এমনটা হওয়ার কথা নয়। এমন ধরনের সামরিক বিজয়ের জন্য প্রয়োজন হয় কৌশলগত পরিকল্পনা এবং গোপন সহায়তা। এ কারণেই প্রশ্ন জাগে, আইএসআইএসের পেছনে ঠিক কারা আছে?
লেখক : বৃটিশ সাংবাদিক। দ্য সানডে টাইমস, ইন্ডিপেনডেন্ট, দ্য অবজারভার, দ্য মিরর এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড পত্রিকায় কাজ করেছেন। ২০০১ সালে নাইন ইলেভেনের পর সানডে টাইমস পত্রিকার হয়ে আফগানিস্তান যান। সেখানে তালেবানদের হাতে আটক হন। পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
No comments :
Post a Comment