আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

May 14, 2014

নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব

নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব

রংধনু আসরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। তবে, বর্তমান বিশ্বে শ্রমিক, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষরা কিন্তু ভালো নেই। বহু দেশে শ্রমিকরা তাদের গায়ের ঘাম ঝরিয়ে কাজ করলেও ঠিকমত পারিশ্রমিক পায় না। শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া ও তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে প্রতি বছরের ১লা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হাজার হাজার শ্রমিক তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের জন্য প্রতিবাদ বিক্ষোভে নেমেছিলেন। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং এক পর্যায়ে মার্কিন সরকার শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়। তখন থেকে সারাবিশ্বে ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে, যে দেশের শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে আজকের দিনটি শ্রমিক দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে, সে দেশে কিন্তু ১লা মে শ্রমিক দিবস পালিত হয় না। আমেরিকা ও কানাডায় প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার শ্রমিক দিবস পালন করা হয়।

আমেরিকায় ১৮৮৬ সালে শ্রমিকরা তাদের অধিকার ফিরে পেলেও ইসলাম ধর্ম প্রায় দেড় হাজার বছর আগে শ্রমিকদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে শ্রমিকের হাতে চুমু খেতেন। তাবুকের যুদ্ধ শেষে রাসূলে খোদা যখন মদীনায় ফিরে আসেন তখন বিশিষ্ট সাহাবি সা'দ আনসারি তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। রাসূলুল্লাহ আনসারির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তার হাতের তালুতে কঠোর পরিশ্রমের ফলে সৃষ্ট খসখসে দাগ অনুভব করেন। তিনি বুঝতে পারেন, অধিক পরিশ্রমের ফলে সা'দ আনসারির হাতের তালু ফেটে গেছে। তিনি আনসারির হাতে চুমু খেয়ে বললেন, "এই হাতে কখনো জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।"

ইসলাম ধর্মে শ্রমিকদের মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি নিজের কাজ নিজে করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।  ইমাম আলী (আ.) শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে আরো বলেছেন, "কঠোর পরিশ্রম করবে, কারণ, পরিশ্রম ছাড়া কোন কিছু অর্জিত হয়নি।" তিনি আরো বলেছেন : "কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তি জীবনে সফল হয়, বুদ্ধিমান অলস ব্যক্তি নয়।"

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এবং নবী বংশের মহান ইমামগণ নিজের কাজ নিজেই করে গেছেন। রাসূলেখোদা বলেছেন, 'নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। আর কারো ভরসা করাও ঠিক নয়।' নিজের কাজ নিজে করার ব্যাপারে রাসূল (সা.) যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন, তেমনি নিজে তা করিয়ে দেখিয়ে গেছেন। পরিশ্রমের গুরুত্ব দিতে গিয়ে বিশ্বনবী (সা.)  বলেছেন, "যদি তোমার হাতে একটি চারাগাছ থাকে এবং তুমি জানো যে কিছুক্ষণ পর তুমি মারা যাবে কিংবা কিছুক্ষণ পর কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে, তারপরও তুমি সেটি রোপন করে মারা যাও।"

তো বন্ধুরা, নিজের কাজ নিজে করা বা পরিশ্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে এ পর্যায়ে কয়েকটি ঘটনা শোনা যাক।


একবার এক সফরে বের হয়ে গন্তব্যে পৌঁছার পর রাসূলে (সা.) ও তাঁর সাহাবী নিজ নিজ বাহন থেকে নেমে পড়লেন। নিজেদের মালপত্র নামিয়ে রাখলেন নির্ধারিত স্থানে। তারপর সকলে মিলে ঠিক করলেন, একটি দুম্বা জবাই করে খাবার তৈরি করা হবে। একজন সাহাবী বললেন, দুম্বা জবাই করার দায়িত্ব আমার। আরেকজন বললেন, দুম্বার চামড়া ছাড়ানো ও গোশত কাটার দায়িত্ব আমি নিলাম। তৃতীয় জন বললেন, গোশত রান্না করার দায়িত্ব আমার। এভাবে সাহাবীরা নিজ নিজ দায়িত্ব ভাগ করে নিলেন। এসময় রাসূল (সা.) বললেন, 'কাঠ কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমার।'

রাসূলের কথা শুনে এক সাহাবী বলে উঠলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা উপস্থিত থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন? আপনি বিশ্রাম নিন। আমরা আনন্দের সাথে সমস্ত কাজ ঠিকঠাকমত সেরে নেবো। সাহাবীদের কথা শুনে রাসূলেখোদা বললেন, "আমি জানি এ কাজ তোমরা করে নিতে পারবে। কিন্তু মহান আল্লাহ সে বান্দাকে কখনোই ভালবাসেন না, যে বন্ধুদের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে।" এ কথা বলে তিনি বনের দিকে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালানী কাঠ ও খড়-কুটো নিয়ে ফিরে এলেন।

আরেকদিনের ঘটনা। রাসূল (সা.) এর কাফেলাটি অনেকক্ষণ যাবত পথ চলার কারণে সবার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল। বহনকারী পশুগুলোও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এসময় কাফেলাটি এমন একটি স্থানে পৌঁছলো যেখানে কিছু পানি ছিল। কাফেলা থেমে গেলে রাসূলেখোদা উটের পিঠ থেকে নিচে নেমে এলেন। এরপর সবাইকে নিয়ে তিনি পানির দিকে পা বাড়ালেন ওজু করার জন্য। কিন্তু কয়েক ধাপ চলার পর কাউকে কিছু না বলে আবার নিজের উটের দিকে ফিরে এলেন। রাসূলুল্লাহর সাহাবী ও সাথীরা আশ্চর্য হয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন যে, মনে হয় যাত্রাবিরতির জন্য এ স্থানটি নবীজীর পছন্দ হয়নি। এখনই হয়তো তিনি রওনা হবার নির্দেশ দেবেন।

কাফেলার সবাই যখন রাসূলের নতুন নির্দেশ শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন তখন দেখা গেল, মহানবী উটের কোমর বাঁধার রশি হাতে নিলেন এবং উটের কোমর বাধতে শুরু করলেন। তাড়াতাড়ি বাঁধার কাজ শেষ করে তিনি আবার পানির দিকে গেলেন ওজু করতে। এ সময় চারদিক থেকে সাহাবীরা এসে বললেন, হে আল্লাহ রাসূল! আপনি এ কাজের জন্য আমাদেরকে কেন হুকুম দিলেন না? আপনি কেন কাজটি করতে গেলেন? আমরা তো গর্বের সাথে এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।
নবীজী তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, "নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। কার কারো ভরসা করাও ঠিক নয়। সে কাজ যত ছোট কিংবা যত বড়ই হোক না কেন। "
রাসূলের জবাব শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হয়ে গেলেন।

বন্ধুরা, এবার আমরা রাসূলেখোদার বংশধর বা আহলে বাইতের ইমামদের জীবন থেকে নেয়া দুটো ঘটনা শোনাব। আহলে বাইতের ৮ম ব্যক্তিত্ব-ইমাম জাফর সাদেক (আ.) একদিন শ্রমিকের পোশাক পড়ে হাতে বেলচা নিয়ে জমিতে কাজ করছিলেন। অনেকক্ষণ ধরে কাজ করার কারণে তাঁর সারা শরীর ঘামে ভিজে চপচপ করছিল। এমন সময় আবু আমর শাইবানী নামের এক ব্যক্তি সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে দেখতে পেল, ইমামের দেহ থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। সে ভাবলো, হয়তো শ্রমিক না পাওয়ায় ইমাম নিজেই নিজের ক্ষেতের কাজ করছেন। লোকটি ইমামের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, হে ইমাম, আপনি তো ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। আপনার বেলচাটা আমাকে দিন। বাকী কাজটুকু আমিই করব। জবাবে ইমাম বললেন, "না না, তা কী করে হয়! আসলে আমার দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, মানুষ রোজগারের জন্য নিজে পরিশ্রম করুক এবং রুটি-রুজি অর্জনের জন্য রোদের প্রখরতা সহ্য করুক।"

বন্ধুরা, ইমাম জাফর সাদেকের পর এবার আমরা তাঁর পুত্র ইমাম মুসা কাযেম (আ.) এর একটি ঘটনা শোনাচ্ছি।
ইমাম মুসা কাযেম (আ.) একদিন প্রচণ্ড রোদের মধ্যে নিজের জমিতে কাজ করছিলেন। এমন সময় আলী ইবনে আবী হামযা নামক এক ব্যক্তি ইমামের কাছে এসে বললো, হে ইমাম! আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। আপনি এ কাজটি অন্য লোককে দিয়ে করাচ্ছেন না কেন? ইমাম বললেন, আমি আমার কাজ অন্যকে দিয়ে করাব কেন? তোমার জানা উচিত, আমার চেয়ে উত্তম লোকেরাও এ ধরনের কাজ নিজেরাই করেছেন। লোকটি বলল, আপনি কাদের কথা বলছেন?
ইমাম মুসা কাযেম বললেন, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.), আমীরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের সবাই এ জাতীয় কাজকর্ম নিজেরাই করে গেছেন। মূলত ক্ষেত-খামারে কাজ করা আল্লাহর নবী-রাসূল, তাঁদের প্রতিনিধি ও উত্তরসূরীদের সুন্নত।

রাসূলেখোদা ও তাঁর বংশধরদের জীবন থেকে নেয়া ঘটনাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি- জীবনের সব অবস্থায় পরিশ্রম করে যেতে হবে এবং কোনো অবস্থায়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না।

আমাদের আরো পেইজঃ
সাংবাদিক
IQRA-পড় প্রভুর নামে
স্বাস্থ্য পেপার
ভালোবাসার নীল নকশা

No comments :

Post a Comment