আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

May 16, 2014

পাবনায় কলেজছাত্র অপহরণ

পাবনায় কলেজছাত্র অপহরণ : উদ্ধার না করেই পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল

পাবনায় মেধাবী কলেজছাত্র অপহরণের দীর্ঘ ৬ মাসেও খোঁজ মেলেনি। পুলিশের মধ্যস্থতায় অপহরণ-কারীদের বারবার বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিয়েও সন্তানকে ফিরে না পাওয়ায় বাবা-মা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছে। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় দফায় দফায় অপহরণকারীদের টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া পরিবারটি পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। এদিকে গ্রেফতারকৃতরা অপহরণের স্বীকারোক্তি দেয়ার পরেও ভিকটিমকে উদ্ধার না করে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বজনরা।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, পাবনা সদর থানার গয়েশপুর পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা আবদুল মান্নানের ছেলে ও পাবনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র এনামুল হক সানী ওরফে মিশুক গত বছরের ১৬ নভেম্বর পরীক্ষার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। পথিমধ্যে মিশুক অপহরণের শিকার হয়। অপহরণকারীরা পরের দিন রাতে মিশুকের মোবাইল ফোন থেকে তার ভাই আবদুল মতিনের মোবাইলে ফোন করে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বলে, 'তোর ভাইকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে হলে পুলিশকে না জানিয়ে দ্রুত ঈশ্বরদী রেলওয়ের প্লাটফর্মে টাকা নিয়ে চলে আয়'। এরপর থেকে ওই মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে এ ব্যাপারে মিশুকের ভাই আবদুল মতিন বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পরে এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফজলে এলাহী জানান, গয়েশপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম, দ্বীপচর গ্রামের সেলিম রেজা ও সাইফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার চালা সাতমাথা গ্রামের আবু তালেব শেখ ও সলঙ্গা থানার বেতুয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এসআই ফজলে এলাহী গ্রেফতার-কৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে আরও বলেন, পাবনা ক্যাডেট কলেজের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী আশরাফুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়। পরে চাকরি দিতে না পেরে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে মিশুককে অপহরণ করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আশরাফুল ও সাইফুল মিলে মিশুককে অপহরণ করে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীতে সবাই মিলে আনন্দ ফূর্তি করে। ওই দিন বিকেলে মিশুককে সঙ্গে নিয়ে নৌকাযোগে গোয়ালন্দ ঘাট থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর যায়। সেখান থেকে তারা পরদিন সাদা মাইক্রোবাস যোগে সিরাজগঞ্জ রোডে গিয়ে রাত্রি যাপন করে। এরই মধ্যে মিশুককে ফেরত দেয়ার কথা বলে তারা মিশুকের পরিবারের নিকট থেকে দফায় দফায় বিকাশের মাধ্যমে নগদ টাকা গ্রহণের কথাও স্বীকার করেন। পরে অপহরণকারীরা আর মিশুককে ফেরত দেয়নি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফজলে এলাহী চলতি বছরের ২১ এপ্রিল দ.বি. ৩৬৪/৩৪ ধারায় মামলাটি আমলে নিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন। আসামিদের স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও অপহৃত কলেজছাত্র মিশুককে উদ্ধার না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, পুলিশ প্রশাসন ইচ্ছা করলেই সম্ভব ছিল অপহরণকারীদের খুঁজে বের করা। তারা অজ্ঞাত কারণে গাফিলতি করে মিশুককে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। বিভিন্ন সময়ে উভয় পক্ষের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করারও অভিযোগ করেন তারা। তারা আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। 

মিশুকের ভাই মোক্তার হোসেন জানান, অপহরণের সপ্তাহ খানেক পরে আবারও তারা ফোন দিয়ে মুক্তিপণের টাকা বিকাশে পাঠিয়ে বাঘাবাড়ি ব্রিজের ওপর যেতে বলে। আমরা টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিয়ে আমার ভাইয়ের জন্যে বাঘাবাড়িতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে পুনরায় তাদের ফোন বন্ধ পাওয়ায় আমরা ফিরে আসি। আমার ছোট ভাই অপহরণের পর থেকেই বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পরেছে। বাবা-তো একেবারেই শয্যাশায়ী। আমার মা যে কোন সময় মারা যেতে পারে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

এ প্রসঙ্গে পাবনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, এনামুল হক সানী এই কলেজের অটোমোবাইল বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। চলতি বছরের তার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কলেজের পক্ষ থেকে প্রশাসনের প্রতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ছাত্রকে উদ্ধারের অনুরোধ করা হয়।

এ ব্যাপারে পাবনা সদর থানার ওসি কাজী হানিফুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্ত শেষে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন আর আমাদের কিছুই করার নেই।

এ প্রসঙ্গে পাবনার পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কলেজ ছাত্র এনামুল হক সানী ওরফে মিশুক অপহরণের বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট থেকে জেনে বিস্তারিত বলতে পারব।


No comments :

Post a Comment