আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

May 31, 2014

মেয়েদের সাদাস্রাব


মেয়েদের সাদাস্রাব


দুর্বলতা, ক্ষয়রোগ বা ধাতুভাঙ্গা বলে পরিচিত অসুস্থতা আসলে আর কিছু নয়, এটি হচ্ছে মেয়েদের সাদাস্রাব জনিত সমস্যা। সাদাস্রাব নারীর শরীরের স্বাভাবিক নিঃসরণ। তবে সব সাদাস্রাবই স্বাভাবিক নয়। সাদাস্রাব বিষয়ক সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ৫৪৯ জন নারীর মধ্যে ২২% এর ক্ষেত্রে এই নিঃসরণ এতটাই স্বাভাবিক যে তাদের আলাদা কাপড়, প্যাড বা প্যান্টি ব্যবহার করতে হয়েছে। ৫০.৩% এর ক্ষেত্রে এর রং ও ঘনত্বের পরিবর্তন ছিল লক্ষ্যণীয় এবং ৫৩.৭% বলেছে সাদাস্রাবের সমস্যার সাথে চুলকানীও ছিল। উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালে বরিশাল বিভাগের পাঁচটি জেলায় (বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরগুনা) অবস্থিত বিভিন্ন গ্রামের ১০-৭০ বছর বয়সের ৫৪৯ জন নারীর ওপর সমীক্ষাটি করা হয়। তাদের মধ্যে ৭৯% বিবাহিত এবং ৬৯% অন্তত এক সন্তানের মা। তাদের কেউ কেউ ২৫ বছর ধরে স্বাভাবিক সাদাস্রাব জনিত সমস্যায় ভুগছেন ২০০১-২০০৩ সালে ঢাকা শহরের একটি বস্তিতে ১৫-১৯ বচল বয়সের ১৫৩ জন বিবাহিত মেয়ের উপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত অপর একট সমীক্ষায় দেখা যায় যে ৫৭.৫১% মেয়েরাই অস্বাভাবিক সাদাস্রাব জনিত সমস্যায় ভুগছেন।

সাদাস্রাবের অস্বাভাবিক শারীরিক, মানসিক, বৈবাহিক ও সামাজিক জটিলতা তৈরী করে থাকে। অথচ সাদাস্রাবের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা তেমন কোন কঠিন ব্যাপার নয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানলে ও নিজের ব্যাপারে একটু সচেতন হলে এই শারীরিক সমস্যা থেকে অনেকাংশেই মেয়েরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে।



সাদাস্রাব

পানির মতো তরল পিচ্ছিল স্বচ্ছ সাদা পদার্থ যা মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। এটা জরায়ু ও যোনিপথের সাধারণ নিঃসরণ যাতে মরা কোষ ও কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। এটি এক ধরনের অম্ল নিঃসরণ।



স্বাভাবিক সাদাস্রাব

যে কোনে সুস্থ্য নারীর শরীর থেকে এ ধরনের নিঃসরণ খুবই স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয়। যোনিপথ নারীদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কারণ, ১) এটি একটি যৌন অঙ্গ, সহবাসে এটি সরাসরি ব্যবহৃত হয়। ২) এটি একটি প্রজনন অঙ্গ, এই পথে বাচ্চা ভুমিষ্ঠ হয়।  ৩) এই নলাকার অঙ্গের মাধ্যমে পেটগহবরের সাথে বাইরের সরাসরি যোগাযোগ আছে, তাই যোনিপথের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি এবং তা পেটগহবরে ছড়িয়ে গিয়ে জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। স্বাভাবিক সাদাস্রাব এই অঙ্গের সুস্থতা বজায় রাখতে, একে কর্মক্ষম রাখতে ও পেটগহবরের সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সাদাস্রাবের পরিমাণ নারীর জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হতে পারে। বিশেষ কিছু সময়ে যেমন, যৌন ভাবনা বা উত্তেজনার সময়, ডিম্ব প্রস্ফুটনের সময় (ঋতুচক্রের মাঝামাঝি সময়), মাসিকের আগে ও পরে, গর্ভকালীন সময় ও সদ্য ভুমিষ্ঠ মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে একটু বেশি নিঃসরণের স্বাভাবিক মান বজায় রাখা জরুরি, নতুবা তা অস্বাভাবিক সাদাস্রাবে রুপান্তরিত হতে পারে।



অস্বাভাবিক সাদাস্রাব

যে স্রাব নিঃসরণে অস্বস্তি বোধ হয় যেমন;

বেশি পরিশাণ নিঃসরণ যাতে পরনের কাপড়, পেটিকোট, পাজামা বা প্যান্টি বেশি ভিজে যায়।
নিঃসরণের সাথে যোনিপথ ও আশেপাশের অংশ চুলকায়।
নিঃসরণের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়।
নিঃসরণ স্বচ্ছ সাদা, তরল ও পিচ্ছিলের পরিবর্তে বাদকামী, সবুজ, হলুদ বা ঘন সাদা থকথকে হয়।
ফেনসাদা বা চাল ধোয়া পানির মতো তরল পদার্থ বের হয়।


অস্বাভাবিক সাদাস্রাব শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও আমিষ বের করে দেয়। এ সময়ে পুষ্টি, বিশ্রাম ও সচেতনতার অভাবে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয় এবং এক সময় ক্ষয় হতে শুরু করে। এ ধরনের উপসর্গ শুধু অস্বস্তি তৈর করে না বরং বিভিন্ন রোগের উপসর্গ; বিশেষ করে জীবাণু সংক্রমণ। এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বিবেচ্য। তাই এ বিষয়ে সব মেয়ের এমনকি ছেলেদেরও জানা দরকার, তাহলে আমরা প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হব ।

সাধারণ কিছু সংক্রমণের ধরণ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল:

সংক্রমণের নাম →          সাদাস্রাবের ধরণ

ইস্ট (ফাঙ্গাস) →ঘন, সাদা দেখতে পনিরের মতো

ট্রাইকোমোনিয়াসিস→ সবুজ, হলুদ অথবা ঘিয়ে রঙের ফেনযুক্ত

ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ→ মাছের গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব

গনোরিয়া→ধোয়াটে, হলুদ কখনও কখনও কোন উপসর্গই থাকে না

ক্লামাইডিয়া→ বিশেষ কোন উপসর্গই থাকে না


সংক্রমণ ছাড়াও হতে পারে
অপুষ্টি
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব
বিভিন্ন অসুস্থ অবস্থা। যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, এন্টিবায়োটিক সেবন অস্বাভাবিক সাদাস্রাবের কারণ হিসেবে বিবেচ্য

প্রতিকার

১। এ সমস্যা কেন হয় এ বিষয়ে নারীদের ধারণার ব্যাপকতা সম্পর্কে গবেষণায় দেখা যায়; ৫৩.৪% মনে করেন এটি ছোঁয়াচে না। ৪০.৬% বলছেন এটি ছোঁয়াচে। যারা ভাবছেন এটি ছোঁয়াচে না তারা বলেছেন, এটি বংশগত, অধিক পরিশ্রম, পুষ্টিহীনতা, পঁচা বা বাসী খাবার খাওয়া, বেশি বাচ্চা জন্ম দেয়া, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও সুঁই ব্যবহারের কারণে হয়। যারা ভাবছেন এটি ছোঁয়াচে তারা বলেছেন, ব্যক্তিগত পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতার অভাব, অনিরাপদ পানি ব্যবহার, একে অন্যের কাপড় পরা, সবাই একই থালাবাটি ব্যবহার করা ।

No comments :

Post a Comment