অসুস্থতার কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রোজা রাখতে পারেন না। আবার অনেকে আছেন যারা হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, পেপটিক আলসার কিংবা ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে।
এ ধরনের ব্যক্তিদের অনেকেই ইচ্ছা থাকার পরও রোজা রাখতে পারছেন না সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকদের মতে, যেসব রোগ ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে
রাখা যায় সে ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিস:
ডায়াবেটিস রোগীরা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব ডায়াবেটিস রোগী বিশেষ খাবার এবং
ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তাদের জন্য রোজা খুব সহজ ও উপকারি বলে উল্লেখ
করা হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়। তবে যারা মুখে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন
তারাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারবেন। আর ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীরাও
রোজা রাখতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডায়াবেটিস থাকলে চিনি-মিষ্টি-গুড়-মধু শরবত কিংবা অন্যান্য খাবার থেকে মিষ্টি বাদ দিতে হবে।
অতিরিক্ত মিষ্টি না খেয়ে বরং মিষ্টি ফল খেলে একদিকে দেহে শর্করার প্রয়োজন মেটে অন্যদিকে রক্তে
শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকে। এছাড়া তাজা ফল থেকে তৈরি রস ইফতারে রাখা যেতে পারে। খাওয়া
যেতে পারে তরমুজ বা বাঙ্গী জাতীয় ফল, ডাবের পানি প্রভৃতি। রাখতে পারেন নানা শাক-সবজিও।
অ্যাসিডিটি সমস্যা:
পেপটিক আলসারের রোগী হলে ডুবো তেলে ভাজা এবং ঝাল খাবার বাদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে তারা
খেতে পারেন চিড়া, কলা, চিড়া-দই, মুগের ডালের নরম খিচুড়ি, নুডুলস ইত্যাদি। আবার রোজা রাখার
সময় যাতে অ্যাসিডিটি দেখা না দেয় তা প্রতিরোধের জন্য আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি ও ফলমূল
খাওয়া উচিত।
কোলেস্টেরলের আধিক্য:
রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি থাকলে ইফতারিতে তেঁতুল ও রসুনের চাটনি
খাওয়া যেতে পারে। যদি কোন কারণে ডাল খাওয়া নিয়েও সমস্যা থাকে, তাহলে ইফতারিতে চালের
গুঁড়া বা ময়দার বড়া এবং চিড়া, দই, নুডুলস, ফ্রায়েড রাইস খাওয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন:
ওজন বেশি থাকলে তেলের পরিমাণ কমাতে হবে এবং সম্পূর্ণ খাবার থেকে ক্যালোরি কমাতে হবে।
সুষম খাবার খেয়ে রোজা রেখে ইফতারের আগে হাত-পা সঞ্চালন জাতীয় হালকা ব্যায়াম এবং
সময়মতো নামাজ আদায় করলেই অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোজা থেকে ওজন
কমানোর সুযোগ পান। এদিকে যাদের ওজন কম তাদের জন্য ইফতারিই আদর্শ।
হাই-ব্লাড প্রেসার:
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বেলায়ও একই ব্যবস্থা অবলম্বন করা যায়। তবে কথা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ওষুধ
পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। কারণ ওষুধ
পরিবর্তনের ফলে রক্তচাপ খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে নাও আসতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নতুন
নিয়মে এবং সময়ে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য অবশ্যই আগে ট্রায়াল দিতে হবে।
সবশেষে বলা যায়, রমজান মাসে যে খাবারই গ্রহণ করুন না কেন, তা যেন সহজপাচ্য ও সীমিত হয়।
কারণ, এ সময় অতিরিক্ত খাবার দেহের রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে পরিবর্তন আনে, ফলে
রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এতে শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হয়।
No comments :
Post a Comment