আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

Jul 17, 2014

ইসরাইলের নারকীয় কর্মকাণ্ডের প্রামাণ্য

গাজা যুদ্ধের ডায়েরি: ইসরাইলি বাহিনীর 


পশ্চিমা মিডিয়ায় গাজাতে ইসরাইলি হামলার ঘটনা কি আসলেই সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে? এই প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধাবিভক্ত। ইসরাইলের নারকীয় হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের মানবিক বির্পযয়ের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে অনেক স্থানীয় ফিলিস্তিনি সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশ করছেন প্রকৃত অবস্থা। তেমনই একজন ফিলিস্তিন নারী 'রাশা এন আবুশাবান', তিনি ফিলিস্তিনে একটি আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত। ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি আর স্থানীয় অদেখা বিষয় নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে লিখে চলেছেন।

১৫ জুলাই ২০১৪

রক্তপাত আর হামলার মধ্য দিয়ে আরেকটি দিন প্রায় শেষ। রাতের শুরুটা ছিল অনেক শান্ত যেমনটি আমি চেয়েছিলাম। ঝড় আসার পূর্বে যেমন শান্ত হয় তেমন। চারপাশে এই মুর্হুতে কোনো বিস্ফোরনের শব্দ নেই, কিন্তু ইসরাইলি ড্রোনের অনবরত টহল এবং সাপের মতো হিসহিস শব্দ মাথার মধ্যে আঘাত হানছে রাতদিন। তবে আমার নিরবতা উপভোগ মনে হয় সহ্য হলো না ইসরাইলি বাহিনীর। বিশ্বকাপ ফুটবলে জার্মানী এবং আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলার পরপরই বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হলো। তবে কি ইসরাইলি যুদ্ধ বিমান পাইলটের খেলার ফলাফল পছন্দ হয়নি? ওহ আল্লাহ, আবার আরেকটি বড় বিস্ফোরণ। বোমাটি আমার বাড়ি থেকে একটু দূরেই গাজার একটি পুলিশ স্টেশনে আঘাত হেনেছে, সেইসময় আমরা সবাই সেহেরী খাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের কথা মনে হলো।

বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হলো
সেহেরী খাওয়া শেষে আমি বারান্দায় গিয়ে কিছু সময়ের জন্য বসলাম। বসে থাকলাম ভোর না হওয়া পর্যন্ত। ইসরাইলি আক্রমন শুরু হওয়ার পর হতে আমাদের ব্লকে সিটি কর্পোরেশনের সেবা সেবা বন্ধ, চারিদিকে বিকট গন্ধ। এক প্রতিবেশিকে দেখলাম গন্ধ দূর করতে তার গ্যারেজের সামনে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে। আবহাওয়া এখন খুবই উত্তপ্ত এবং সেজন্য গন্ধ অসহনীয় হয়ে উঠছে।
দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। ইসরাইল এখনও বাড়িঘর, মসজিদ এবং হাসপাতালগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনে সবচেয়ে বাজে খবরটি হচ্ছে, আল শিফা হাসপাতালের একজন ডাক্তার নিশ্চিত করেছে যে ইসরাইল তাদের হামলায় DIME weapons (কার্বন এবং ক্ষতিকর ধাতু দিয়ে তৈরি অস্ত্র) ব্যবহার করছে। DIME এমন এক ধরণের অস্ত্র যা বিস্ফোরনের পর মানবদেহে মধ্যে কার্বন এবং কিছু ক্ষতিকর ধাতু প্রবেশ করে শরীরে শিরা-উপশিরা ও রক্তনালী ছিড়ে ফেলে। আহত ব্যক্তি অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে ধীরে ধীরে মারা যায়। হামলায় ওই ধরণের অস্ত্র ব্যবহার কয়ায় আহতদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে ডাক্তারদের।
গত কয়েকদিনের হামলার ব্যাপারে আমরা শুনেছি, ইসরাইল তাদের হামলায় নানা ধরনের অস্ত্র/রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছে যা আর্ন্তজাতিকভাবে নিষিদ্ধ। যদিও ওই সব কার্বন এবং ফসফরাস জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের ক্ষতিকর প্রভাব ফিলিস্তিনিরা অনেক আগে থেকেই বয়ে বেড়াচ্ছে। ইসরাইল কি তাহলে গাজাকে তাদের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করছে? আর ফিলিস্তিনিরা পরীক্ষাগারের ইদুঁর? ফিলিস্তিনিদের কি তারা তাদের অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করছে? কি অমানবিক!
একটি ভিডিও দেখে মন খুব খারাপ হয়ে গেল, একজন ফিলিস্তিনি বাবা তার দুই সন্তানের মৃতদেহ জড়িয়ে ধরে কাঁদছে এবং আহাজারি করে তাদেরকে রক্ষা করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাচ্ছে। ইসরাইলের যুদ্ধ বিমান বা নৌযানের হামলা থেকে নিজের সন্তানকে কিভাবে রক্ষা করবে একজন নিরস্ত্র সাধারন ফিলিস্তিনি পিতা?
বহুল প্রচারিত এবিসি নিউজ (ABC News) এর একটি ভিডিও সংবাদ দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। 'ইসরাইলে বৃষ্টিরমতো রকেট পরছে' শিরোনামে সংবাদটি যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে একটি স্থির ছবিতে একজন ফিলিস্তিনি তার মালপত্র টেনে নিয়ে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সংবাদের বর্ণনায় বলা হচ্ছে একজন ইসরাইলি পরিবার হামলা থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাচ্ছে। মজার ব্যাপার কিছুক্ষণ পরে এবিসি নিউজ তাদের ওই সংবাদটি ভুল বলে ক্ষমা চেয়ে সংশোধনী দিয়েছে। চিন্তা করুন, একটি মিথ্যা সংবাদ লাখ দর্শকের কাছে প্রচার করার পরে সংশোধনী দিয়ে কি ক্ষমা পাওয়া যাবে?

এই ফিলিস্তিনি পরিবারকে ইসরাইলি পরিবার বলে সংবাদ প্রচার করে ক্ষমা চেয়েছে এবিসি নিউজ
আমি চিন্তা করতে থাকলাম, এই যুদ্ধ-হামলা কেনো হচ্ছে? এর কারণ কী? এটা কি শুধু পশ্চিম তীরের সেই ৩ ইসরাইলি হত্যার কারণে হচ্ছে? অথবা ইসরাইলে হামাসের রকেট ছোড়ার জন্য হচ্ছে? হামাসতো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে গাজা উপত্যাকার দায়িত্বে আছে। কে পছন্দ করলো আর কে না, তার চেয়ে বড় কথা গাজার জনগণ তাদের নির্বাচিত করেছে। এখন ইসরাইল গাজার নিরস্ত্র জনগনের উপরে হামলা করছে, এতে করে কি তাদের লক্ষ্যবস্তু হামাস উচ্ছেদ হচ্ছে? নাকি এটি সমষ্টিগত শাস্তি? অন্যায় হামালার প্রতিরোধ গড়ে তোলা ফিলিস্তিনি যোদ্ধা, হামাস সদস্য, পুলিশ-সরকারি কর্মকর্তাদের উপর ইসরাইল হামলা করার সাথে সাথে তাদের পরিবার এমনকি স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ, পানিশোধন কেন্দ্র এমনকি প্রতিবন্ধী পূর্নবাসন কেন্দ্রেও হামলা চলছে। ওইসব স্থানে কি ফিলিস্তিনি অস্ত্রগার ছিল? আর্শ্চয আচরণ! কোনো আইন, যুক্তি বা ত্বত্তে এটা মেলানো যাবে না। গাজার হাসপাতাল সূত্রমতে, ইসরাইলি হামলায় নিহতদের ৭০% নারী-শিশু এবং ৯০% সাধারণ ফিলিস্তিনি।
আমাদের কাছেতো ইসরাইলের মিসাইল ঠেকানোর মতো কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই (যেমন ইসরাইলের 'আয়রন ডোম' আছে)। তারা কি ফিলিস্তিনিদের দমনে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ হত্যা করতে চাচ্ছে? যদি তাই হয়, তাহলে তারা কেনো তাদেরকে ধরে নিয়ে মারছে না? ইসরাইল এটা ইচ্ছে করলেই করতে পারে। সেটা না করে ইসরাইল ফিলিস্তিনের সাধারন নারী-শিশু-জনতার ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে জনগণের মাধ্যমে হামাসকে চাপ দিতে চাচ্ছে। ইসরাইল কি সঠিকভাবে বলতে পারবে হামাস তাদের ওপর কয়টি রকেট ছুড়েছে? যদিও হামাসের রকেট নিয়ে তাদের ভৌতিক-গাল গল্পের শেষ নাই।
অন্যদিকে গাজাতে ইসরাইলি হামলার অনেক হ্নদয়স্পর্শী, অমানবিক এবং নিষ্টুর গণহত্যার ঘটনার উদাহরণ আছে। আমি রাজনীতি করছি না, করতেও চাই না। আমি শুধু চিন্তিত গাজা উপত্যাকার সেইসব মানুষদের জন্য যারা প্রতিদিন মারা যাচ্ছে এবং প্রতিদিন নানা কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

নিহতদের ৭০% নারী-শিশু এবং ৯০% সাধারণ ফিলিস্তিনি
আমি কল্পনা করি, যদি প্রতিরোধের জন্য ফিলিস্তিনিদের কাছে উন্নত অস্ত্র-প্রযুক্তি থাকতো এবং তারা যদি গণহত্যার জন্য ইসরাইলের প্রতিটি দোষী সেনা এবং রাজনীতিবিদকে সাজা দিতে তাদের পরিবার-প্রতিবেশীদের উপর হামলা করতো.. তাহলে কী হতো? হয়তো ইসরাইলের নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
আমি ইসরাইলের একজন অতি-ডানপন্থী নারী রাজনীতিবিদ আয়েলেট শাকেদের স্টেটমেন্ট পড়লাম, যা তিনি তার ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন:
"একজন সন্ত্রাসীল পেছনে কয়েক ডজন নারী-পুরুষ রয়েছে, তাদের সর্মথন ছাড়া সে সন্ত্রাসী হতে পারে না। তারা সবাই আমাদের শত্রু, তাদের মাথায় তাদের রক্ত দেখা যাবে। বাদ যাবে না সেই মা'ও যে তার সন্তানকে ফুল আর চুম্বনে তার সন্তানকে দোজখে ঠেলে দিয়েছে। তাদের পরিনিতিও তার সন্ত্রাসী সন্তানের মতই হবে।"
কি অমানবিক কথা? আমরাও তাহলে আয়েলেট শাকেদের মতো সব ইসরাইলিকে শক্র মনে করি। কারণ ৬৬ বছর আগে, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যা চলেছে, জনগণকে তাদের বাড়িঘর ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, আর ফিরতে দেওয়া হয়নি এবং আর্ন্তজাতিক আইন লঙ্ঘন করে নানা অন্যায্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ইসরাইল রাষ্ট্রই গঠিত হয়েছে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের অবৈধ উচ্ছেদ আর ভূমি দখলের মাধ্যমে। সেই থেকে ফিলিস্তিনিরা আক্রান্ত, অধিকৃত, নির্যাতিত এবং বিচ্ছিন্ন জনগোষ্টিতে পরিণিত। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কখনই ভূমিহীন ছিল না এবং আমাদেরও ভূমি ফিরে পাওয়ার পুরো অধিকার রয়েছে।
একটি খবর পড়ে দিন শেষ হলো। ইসরাইলি হামলা প্রতিরোধে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা কিছু পাইলট ছাড়া ছোট ছোট ড্রোন ছেড়েছে, যা ইসরাইলের অনেক ভিতরে আঘাত হানতে সক্ষম। এটা আমার কাছে সারাদিনের উল্লেখজনক ঘটনা। হুমম...বিশ্বাস থাকলে ক্ষুদ্র কিছু থেকই অনেক কিছু আবিস্কার ও তৈরির মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়া যায়। ওইসব ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা পারছে যা সারা আরব বিশ্বের অকর্ম-অকার্যকর সেনারা করতে পারেনি। মিশরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের খবরটিও দেখলাম। আগামীকাল সকাল থেকে যুদ্ধ বিরতির ওই প্রস্তাবে বিমান, নৌ এবং সেনা হামলা বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসাথে হামাসকেও তাদের রকেট ছোড়া বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে গাজা এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে যে ক্রসিং আছে তা খুলে দিতে বলা হয়েছে, যাতে করে গাজাবাসী তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আনতে পারে এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারে। এটা খুবই ভাল সংবাদ, অপেক্ষা করছি ইসরাইলের জবাবের অপেক্ষায়। আমি আশাবাদী হয়ে উঠছি এবং শুধু আমিই আমার জন্মদিনে (আগামীকাল) আনন্দিত হব না, আরও অনেকেই হবে।

No comments :

Post a Comment