আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

Jul 8, 2014

যুগে যুগে রোজা

সিয়াম বা রোজা নাম ও প্রক্রিয়াভেদে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহুল প্রচলিত একটি ধর্মীয় বিধান, যা মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় (ফরজ) একটি ইবাদত। শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তে যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে সিয়ামের বিধান দেয়া হয়েছে, তেমনি সিয়ামের বিধান দেয়া হয়েছিল পূর্ববর্তী নবীদের শরীয়তেও; পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধর্ম-কর্মেও। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ঘোষণা করেন : হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের প্রতি সিয়াম বিধিবদ্ধ করা হলো যেমনিভাবে সিয়াম বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। তোমরা যেন মুত্তাকি (সাবধানী) হতে পার (সূরা বাকারা : ১৮৩)। এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী ও প্রত্যেক জাতির মধ্যেই প্রচলিত ছিল সিয়াম বা রোজা নামের এই ধর্মানুষ্ঠান।

প্রথম নবী হজরত আদম (আ.)-এর শরীয়তে সিয়ামের বিধান দেয়া হয়েছিল বলে তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য সেই সিয়ামের ধরন ও প্রকৃতি কেমন ছিল তা আমাদের অজানা। এ বিষয়ে বাইবেল, কোরান ও বিশুদ্ধ হাদিস একেবারে নিশ্চুপ। বলা হয়ে থাকে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীর শরীয়তেই চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়ামের বিধান ছিল। এই সিয়াম সিয়াম আইয়্যামি বীজ নামে খ্যাত। প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ দাহ্হাক বর্ণনা করেছেন : হজরত নূহ (আ.) থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়ামের বিধান ছিল। শেষকালে রমজানের মাসব্যাপী সিয়ামের বিধান দেয়া হলে মাসিক তিন সিয়ামের বিধান রহিত হয় [তাফসির ইবনে কাছির (র.)]। অবশ্য কোরান ও বাইবেলে নূহ (আ.)-এর যে জীবন বৃত্তান্ত পেশ করা হয়েছে, তাতে তাঁর সিয়াম পালনের কোনো উল্লেখ নেই।
মূসা (আ.) ও তাঁর জাতির মুক্তির এই মহান দিনে ইহুদিদের সিয়াম পালনের উল্লেখ পাই। আমরা উল্লিখিত হাদিসে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে এই মুক্তির দিনে সিয়াম পালনের উল্লেখ নেই বরং সেখানে উল্লেখ রয়েছে উত্সব পালনের কথা; সিয়ামের বিপরীত পানাহারের কথা। পুরাতন নিয়ম-এর যাত্রা—পুস্তকে এই দিনে ইহুদিদের করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে : আর এই দিন তোমাদের স্মরণীয় হইবে এবং তোমরা এ দিনকে সদাপ্রভুর উত্সব বলিয়া পালন করিবে। পুরুষানুক্রমে চিরস্থায়ী বিধিমতে এই উত্সব পালন করিবে। তোমরা সাত দিন তাড়িশূন্য রুটি খাইবে; প্রথম দিনই আপন আপন গৃহ হইতে তাড়ি দূর করিবে, কেননা যে কেহ প্রথম দিন হইতে সপ্তম দিন পর্যন্ত তাড়িযুক্ত ভক্ষ খাইবে, এই প্রাণী ইসরাইল হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর প্রথম দিন তোমাদের পবিত্র সভা হইবে এবং সপ্তম দিনেও তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; সেই দুদিন প্রত্যেক প্রাণীর খাদ্য আয়োজন ব্যতিরেকে অন্য কোনো কর্ম করিবে না, কেবল সেই কর্ম করিতে পারিবে। এইরূপে তোমরা তাড়িশূন্য রুটির পর্ব পালন করিবে। কেননা এই দিনে আমি তোমাদের বাহিনীদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিলাম। অতএব তোমাদের পুরুষানুক্রমে চিরস্থায়ী বিধিমতে এইদিন পালন করিবে। (যাত্রা পুস্তক, ১২ : ১৪-১৭)ইহুদিদের মুক্তি দিবসের কর্তব্য সম্পর্কে উদ্ধৃত হাদিস ও ভাষ্য পরস্পর সাংঘর্ষিক ও বিপরীতমুখী মনে হয় বাহ্যদৃষ্টিতে। বস্তুত গভীরভাবে চিন্তা করলে উভয় ভাষ্যের মধ্যে কোনো বিরোধ পরিলক্ষিত হয় না।
মদিনার ইহুদিরা যে সিয়াম পালন করত তা ছিল উত্সবকে আরও উত্সবমুখর করে তোলার একটি সহায়ক প্রস্তুতি। সিয়াম বা উপবাস ভোজনের উত্সবকে আরও আকর্ষণীয় ও বেগবান করে তোলে নিঃসন্দেহে। আনন্দ-উত্সব ও সাজসজ্জার মধ্য দিয়েই ইহুদিরা যে এই মুক্তি দিবস উদযাপন করত হাদিসে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলে। আবু মূসা আল আশআরী (রা.) বলেন, খায়বরের ইহুদিরা আশুরাকে ঈদের দিনের মতোই মনে করত (বুখারি শরিফ)। আরেক বর্ণনায় জানা যায় : খায়বরের ইহুদিরা আশুরায় সিয়াম পালন করত এবং ঈদ উত্সবের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করত। সেদিন তারা ইহুদি ললনাদের মূল্যবান অলঙ্কার ও সাজসজ্জায় ভূষিত করত। তখন রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন : এ দিনটিতে তোমরা সিয়াম পালন করো (মুসলিম শরিফ)। এতে প্রতীয়মান হয়, আশুরা হচ্ছে ইহুদিদের উপবাস ও উত্সবের দিন।

একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলে করিম (সা.)-এর সময়ে মদিনার ইহুদিরা সিয়াম পালন করত মুহররম মাসের আশুরা দিন (১০ তারিখে)। হজরত আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, মদিনায় হিজরতের পরে রাসূলে করিম (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার সিয়াম পালন করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কিসের দিন? (তোমরা কিসের সিয়াম পালন করছ?) তখন (তাদের পক্ষ থেকে) জানানো হলো : এ এক মহান দিন। এ দিনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও তাঁর জাতিকে (ফিরআউনের কবল থেকে) উদ্ধার করেন এবং ফিরআউন ও তার দলবদলকে সলিলে নিমজ্জিত করেন। হজরত মুসা (আ.) এ দিনটির স্মরণে সিয়াম পালন করেছিলেন। আমরাও তাঁর অনুসরণে এই সিয়াম পালন করছি। নবী করিম (সা.) তাদের জবাব শুনে বললেন : মূসা (আ.)-এর বিষয়ে তোমাদের চেয়ে আমরা অধিকতর হকদার। এরপর তিনি আশুরার সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন। (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।
ড. আহমদ আবুল কালাম

No comments :

Post a Comment