কখনো কী ভেবেছেন জীবনের কতটা সময় আপনি শুধু পার করে চলেছেন সবকিছু নিখুঁতভাবে পাওয়ার জন্য? হাতের লেখা নিখুঁত করা, নিখুঁত করে আঁকা ছবি, নিখুঁত শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে সব কিছুই আমরা পেতে চাই একেবারে মনের মত। এতটুকু ত্রুটি আমাদের ভাল লাগে না। সবকিছু একেবারে যথাযথ চাওয়ার মানসিকতা আমাদের পরবর্তীতে নানান মানসিক সমস্যার মুখোমুখি করে।
একজন মানুষ যে সবসময় সবকিছু নিখুঁত চান তিনি এক সময় হতাশায় ভুগতে শুরু করেন। সর্বদা নেতিবাচকতা ঘিরে রাখে তাকে। কোনকিছুই তার ভাল লাগে না, পছন্দ হয় না। এমনকি একসময় নিজেকেই বিরক্ত লাগতে থাকে তা্র। এভাবে তিনি পরিণত হতে থাকেন বিষন্নতাগ্রস্থ মানসিক রোগীতে।
 মানুষ যখন নিজেই নিজেকে পছন্দ করেন না তখন তিনি চরম হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন। নিজের সব কাজে অপরের স্বীকৃতি খুঁজতে থাকেন। কিন্তু ভাবুন তো, একজন মানুষ কি একইসাথে সবকিছুতে প্রথম হতে পারেন? সব রকমের দক্ষতা কি একটি মানুষের মাঝে পাওয়া সম্ভব? ভুলত্রুটি মিলিয়েই মানুষ আর এর মাঝেই রয়েছে মানুষের আসল সৌন্দর্য্য।
নিখুঁত বা যথাযথ সঠিকতা কীভাবে নির্ধারিত হয়?
এই যে আমরা সবকিছু নিখুঁত চাই, কোন কাজটি কোন পর্যায়ে গেলে সেটা পরিপূর্ণ নিখুঁত বলা যাবে তার কি কোন সংজ্ঞা কোথাও আছে? একজন মানুষের শারীরিক গঠন খুবই চমৎকার। কিন্তু এটা বাইরের দিক। অন্যদিকে হয়ত তার ওজন অস্বাভাবিক কম, রক্তচাপ কম। এছাড়াও নানান শারীরিক সমস্যা তার রয়েছে। তাহলে কি তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলেন? আপনার লক্ষ্য যদি থাকে জিরো ফিগার, তাহলে সেটাই আপনি পাবেন। একইসাথে সুস্বাস্থ্য পাবেন না। তেমনি আপনি যদি পড়াশোনায় এ+ পেতে চান তাহলে নাচ, গান বা এরকম ক্ষেত্রে প্রথম স্থান ছাড় দিতে হবে আপনাকে।
অভিধান অনুযায়ী নিখুঁত মানে হল এমন একটি অবস্থা যার কোনরকম কোন ত্রুটি বা অপূর্ণতা নেই। ত্রুটি কী অভিধানের ভাষায় ত্রুটি হল কোন ভুল বা পরিকল্পনার এমন খুঁত যার কারণে আপনি লক্ষ্যচ্যুত হতে পারেন। তাহলে এভাবেই বিবেচনা করুন নিজেকে এবং নিজের কাজকে। যে বিষয়টিকে আপনি ত্রুটি মনে করছেন তা কি আপনাকে লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেবে বা আপনার বিফলতার কারণ হবে? ভুলটি কি আপনার কার্যক্ষমতা কমাবে? প্রশ্নের উত্তর একটি কম লিখেও কিন্তু পরীক্ষায় এ+ পাওয়া যায়। তাহলে কেন সময় নষ্ট করবেন সবগুলো উত্তর দেওয়ার জন্য? তারচেয়ে এ+ নিশ্চিত করাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নয় কি?
নিখুঁত নয়, প্রয়োজন ভারসাম্য
সেই জিরো ফিগারের প্রসঙ্গেই আসি। একেবারে নিখুঁত সুন্দর শারীরিক গঠন পেতে আপনি যদি এলোমেলো ডায়েট করতে শুরু করেন তাহলে কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই বিছানায় আশ্রয় নিতে হবে আপনাকে। কিন্তু আপনি যদি শারীরিক কসরত করেন, প্রতিদিন হাঁটা, সাঁতার এধরণের শরীরচর্চা করেন এবং পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শমত খাবার গ্রহণ করেন তাহলে সুন্দর শারীরিক গঠন এবং সুস্বাস্থ্য উভয়ই পেতে পারেন। এতে হয়ত একেবারে জিরো ফিগার পাবেন না আপনি। কিন্তু পাবেন মেদহীন ঝরঝরে সুস্থ্ শরীর।
 জীবনের সর্বক্ষত্রেই এটি প্রযোজ্য। আপনি যত ভারসম্য বজায় রাখতে পারবেন ততই এগিয়ে যাবেন জীবনে। প্রেমিকার কাছে একেবারে নিখুঁত প্রেমিক হওয়ার জন্য পরিবারকে নিশ্চয়ই হারাতে চাইবেন না আপনি? তাই সবখানে সবচেয়ে ভাল হওয়ার চেষ্টা বন্ধ করুন। এটি আপনাকে কখনো মানসিক শান্তি দেবে না, সারাক্ষণ অসন্তুষ্ট করে রাখবে। তারচেয়ে ভারসাম্য বজায় রাখুন, ভাল থাকুন।
নিখুঁত মানুষেরা হয় রোবট
সবকিছুতে নিখুঁত হওয়ার জন্য একজন মানুষ যখন অমানবিক পরিশ্রম করেন তখন তিনি আর স্বাভাবিক মানুষ থাকেন না। পরিণত হোন রোবটে। তার কাছে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, আড্ডা, দেওয়া, ঘুরে বেড়ানো এই সবই হয়ে দাঁড়ায় বাহুল্য। তিনি ঘুম থেকে কখন উঠবেন, কী করবেন, কী করবেন না এমন প্রতিটি কাজ সময় মেপে করেন। এই জীবন না পায় আনন্দ, না পায় মানসিক প্রশান্তি।
ভুল থেকেই আসে সৃজণশীলতা
ভেবে দেখুন তো, একটী দোয়েল আঁকবেন আপনিসহ আরও ১০ জন শিল্পী। সবাই যদি একদম হুবহু দোয়েলটি আঁকেন তাহলে কার আঁকা ছবি কোনটা সেটা কি আলাদা করা সম্ভব হবে? আপনার ভুলটিই তৈরি করবে আপনার বিশেষত্ব। একটি পার্থক্য, একটু ভিন্নতা, একটি সংযোজন একটি সাধারণ কাজকে পরিণত করবে অনন্য শিল্পে।