আসসালামু আলাইকুম

SSC পরিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরিক্ষা দিন এর জন্য আমি দোয়া করছি। সেই সাথে আমার ব্লগে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

Feb 10, 2015

লড়াই-ঐক্যে নজির

রাজনীতিতে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। শেকড় থেকে শিখরের নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে সুনামী বয়ে যাচ্ছে। অপহরণ, ক্রসফায়ার, ট্রাক ফায়ার, গুম, খুনের শিকার, গ্রেফতার ও কারাবরণ করতে হচ্ছে প্রতিদিনই। এমন প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াইয়ের নজির স্থাপন করেছে দলটি। 
শীর্ষ ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বন্দিদশা, অনুপস্থিতিতে চলমান টানা আন্দোলনের চালকের আসনে এখন তৃণমূল ও মধ্যসারির নেতারা। ভাই, বাবা হারানোর শোক থেকে সময় ও প্রয়োজন মতো নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিচ্ছেন। কর্মসূচির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন নিজ নিজ এলাকা।
এক সময় দ্বন্দ্ব-বিরোধে লিপ্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজমান ইস্পাত কঠিন ঐক্যও অতীতের রেকর্ড বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর নুরুল আমিন বেপারী। তিনি বলেন, চরম জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও টানা ৩৮ দিন রাজপথে থাকা বিএনপির জন্য ইতিহাস। বিএনপি এখন মাও সেতুং-এর ‘দ্বন্দ্ব’ গ্রন্থে উল্লেখিত, ‘শত্রুত শত্রু আমার বন্ধু’ নীতিতে এগুচ্ছেন। তাই সাথে ও পাশে পেয়েছেন সরকার বিরোধী সকল রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তি। যারা এক সময় আওয়ামী লীগের বন্ধু ছিল, এখন শত্রুতে পরিণত হয়েছেন, তারাই এখন বিএনপির বন্ধু হয়েছেন। এই দলটির রাজনৈতিক শক্তির মূলে শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার সুকৌশলী পরিকল্পনা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং দিক-নির্দেশনা টনিকের মতো কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে নিহত হওয়ার পর প্রথম হোঁচট খায় দলটি। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। ১৯৮৮ সালে দলের তৎকালীন মহাসচিবের নেতৃত্বে দল প্রথমবার ভাঙনের মুখে পড়ে। ২০০৭ সালেও দলের কিছু নেতা দলে দ্বিতীয় বিভক্তি রেখা টানেন। ওই সময় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতাদের কারাবন্দি করা হয়। সে সময়ের দায়ের করা মামলার বোঝা টানতে হচ্ছে এখনো। 
এদিকে জিয়া পরিবারকে তাদের ৪০ বছরের বসতবাড়ি থেকে সরে আসতে হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসার জন্য তাকের রহমানকে সপরিবারে বিদেশে অবস্থান করতে হচ্ছে। তার কথাও প্রচার-প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। জিয়া পরিবারের ছোট ছেলেকে চিকিৎসার জন্য জীবদ্দশায় বিদেশে গেলেও ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে।
অপরদিকে এক কিলোমিটার দূরে ভাড়া বাড়ি থাকলেও অবরুদ্ধ অবস্থায় নিজ বাসায় ফিরতে পারছেন না বিএনপি প্রধান। বিএনপির ভাষায় তাকে অঘোষিত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ এমনকি নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। অবশ্য বিচ্ছিন্নতার ২০ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় দেয়া হয়। যেদিন পুত্রশোকে কাতর সেইদিনই খালেদা জিয়াকে মানুষ পুড়িয়ে মারার মামলায় আসামি করা হয়েছে। অশালীন ভাষা তীর ছোঁড়া হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দিকে।    
সূত্রমতে, বিএনপি নেতাকর্মীরা গত সাত বছর ধরে মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন। চূড়ান্ত পরিণতির শিকার হতে হচ্ছে বর্তমানে। ঘর-বাড়ি থেকে ধরে এনে ক্রসফায়ার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। রক্ষা পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরাও। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, আগুন, তল্লাশি তা-ব চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে এই গুম, হত্যা, হামলা-মামলার শিকার হতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারাই নয়, গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বাদ যাচ্ছে না। দলীয় হিসেবে গত ৬ বছরে দলের এক হাজার নেতাকর্মীকে গুম-খুন করা হয়েছে। ১৪ হাজার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধকোটি নেতাকর্মীকে। চলমান আন্দোলনে পেট্রোল বোমায় নিহত-আহত হয়েছে অনেকের পরিবারের সদস্য। এদের মধ্যে শুধু বিএনপিই নয়, অন্য রাজনৈতিক দল-মতের মানুষও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিরোধী পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিস্ফোরণে রূপ নিয়েছে। 
অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে ৩৮ দিন। দেয়া হচ্ছে ইস্যুভিত্তিক হরতালও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ক্লান্ত-শ্রান্ত হলেও পিছু হটতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। দলীয় চেয়ারপারসনকে বিচ্ছিন্ন, স্থানীয় শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিচ্ছেন। কারো স্বজন, ভাই, কারো বাবা কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, এখনো হচ্ছেন। শোক থেকে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিরোধ-প্রতিশোধ নিতে ভুলে গেছেন দলীয় দ্বন্দ্ব-বিরোধ। রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন হলেও যারা চলমান আন্দোলনে যুক্তর পক্ষে সমর্থন করছেন সেই সকল শক্তিকে এককাতারে নিয়ে এসেছে দলটি। 
আলাপকালে মেহেরপুর বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির ওপর রাষ্ট্রপক্ষের যে নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে তা দলটি প্রতিষ্ঠার পর নজিরবিহীন। একই সঙ্গে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধে লিপ্ত নেতাকর্মীরা সব ভুলে রাজপথে যে ঐক্য গড়েছে সেটার নজির নেই। সাবেক এই এমপির ভাষায়, দেশে এখন দুইপক্ষের মধ্যে একপক্ষ আওয়ামী লীগ বাকিরা অন্যপক্ষ। আর শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের চালকের আসনে নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনতা। 
দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা প্রসঙ্গে বগুড়া বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের ও দলের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীরা কিছুতেই পিছপা হবে না। ৩৮ দিনই নয়, লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে। এখন র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি আমাদের গুলি করলেও এক সময় বন্দুক উল্টোদিকে ধরতে বাধ্য হবেন। 
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এখন বুঝে গেছে কারা পেট্রোলবোমা তৈরি করে, নিরীহ মানুষ মারতে গাড়িতে নিক্ষেপ করছে। শিগগিরই ওইসকল সন্ত্রাসীরা জনরোষে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন আন্দোলনকারী এই নেতা। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুল আমিন বেপারী তার বিশ্লেষণ থেকে ইনকিলাবকে বলেন, এই দলটির রাজনৈতিক শক্তির মূলে শীর্ষ নেতার সুকৌশলী পরিকল্পনা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং দিক-নির্দেশনা টনিকের মতো কাজ করেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দলটি গঠনের সময় সমালোচকরা বলতেন বিভিন্ন দলের লোকের সমন্বয়ে গঠন করা দলটির কোন আদর্শ নেই, ঐক্যও থাকবে না।  
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহতের পর তার সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া দলটির হাল ধরলেন। তখনো সমালোচকরা ‘বিএনপি’ মানে বলতেন ‘বেসিক্যালি নো পার্টি’। ৯১-এর নির্বাচনে দলটির পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। কিন্তু তার পরও সরকার গঠন করেছে বিএনপি। দলও একটি প্রাতিষ্ঠানিকরূপ পেয়েছে। এখন সবচেয়ে কঠিন সময়ের মোকাবিলা করছে। দীর্ঘ ৩৮ দিন ধরে রাজপথে লড়াই করছে যা অতীতের রেকর্ড হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে।

No comments :

Post a Comment